দেশের প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের সরাসরি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনসের মধ্যকার যাতায়াত শুরু হয়েছে। কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর সড়কের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় যাত্রা শুরু করে দুপুর ১ টায় সেন্টমার্টিনস পৌঁছায় জাহাজটি। সেখানে আড়াই ঘন্টা যাত্রা বিরতীর পর বিকেল সাড়ে ৩ টায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিলাসবহুল এই জাহাজ।
গত বছর ৩০ জানুয়ারি এক জমকালো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য যাত্রা শুরু হয় এই নৌরুটের।
কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনস পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের দাবি দীর্ঘদিনের। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স (লি.) এর উদ্যোগ ও পরিচালনায় অবশেষে এই দাবি পূরণ হল বলা চলে। অন্যদিকে আগামী ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্রগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটার বাসটার্মিনাল থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এই কোম্পানির আরেক বিলাসবহুল ক্রুজশীপ ‘এমভি বেওয়ান’। এটাও চলতি পর্যটন মৌসমে চট্রগ্রাম-সেন্টমার্টিনসের মধ্যে নিয়মিত চলাচল করবে। চট্রগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটেও সমুদ্রগামী বিলাসবহুল কোন জাহাজের যাতায়াত এটাই প্রথম।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লিলাভূমী বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প থেকে এতদিন পিঁছিয়ে থাকলেও যুগান্তকারী কিছু উদ্যোগের কারণে পর্যটনের সম্ভাবনাগুলো ক্রমশঃ এখন ডানা মেলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এই শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও উদ্যোক্তা প্রকৌশলী এম এ রশিদ। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন সমুদ্রভ্রমণে বিলাসবহুল জাহাজের যাত্রার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন এই উদ্যোক্তা তথা শিল্পপতি।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ জানান, এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেসকে নিজস্ব ডকইয়ার্ডে একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল জাহাজ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১১ মিটার প্রশস্ত এই নৌযানে মেইন প্রপালেশন ইঞ্জিন- দুটি। আমেরিকার বিখ্যাত কামিন্স ব্র্যান্ডের এই ইঞ্জিনের একেকটির ক্ষমতা প্রায় ৬০০ বিএইচপি করে। জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে পারে। ১৭টি ভিআইপি কেবিন সমৃদ্ধ এটি। নৌযানটিতে তিন ক্যাটাগরির প্রায় ৫০০ আসন রয়েছে। রয়েছে কনফারেন্স রুম, ডাইনিং স্পেস, সি ভিউ ব্যালকনিসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
উল্লেখ্য, পাহাড় সমুদ্র বরাবরই টানে পর্যটকদের। সাগরের বিশালতার কাছে গেলেই প্রকৃতি সকলকে আপন করে নেয়। তাই বিশ্বের বৃহত্তম সৈকত কক্সবাজার এর গুরুত্ব অন্যতম। এদিকে কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে সাগরবক্ষের ক্ষুদ্রাকৃতির নয়নাভিরাম প্রবাল দ্বীপ- সেন্টমার্টিন। যা বিশ্বের অন্যতম সুন্দর প্রবালদ্বীপ হিসেবে পরিচিত। ফলে পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনস এর গুরুত্ব বরাবরই অসিম। কিন্ত কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনস যাতায়াত করতে পর্যটকদের পাড়ি দিতে হত টেকনাফের এবরোথেবরো বিরক্তিকর দীর্ঘ স্থল পথ। সম্প্রতি এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সেই বোরিং জার্নিকে নীল সমুদ্রের নান্দনিক ভ্রমণে রুপ দিয়েছে। নিংসন্দেহে যা এক বিরল সুযোগ ও সম্ভাবনার পদধ্বনী।
বাহাদুর মাঝেমধ্যেই হারিয়ে যায়। নদী থেকে পানি নিয়ে এখনই ফিরছি বলে মাসখানেকের জন্য নিরুদ্দেশ। খেলতে যাচ্ছি বলে মাস দু-এক লাপাত্তা। আবার একদিন অন্ধকার রাতে সুতারখালী আর শিবসার গায়ে যখন গোলপাতার ঝুলন্ত ঘরগুলোর মধ্যে অন্ধকার জমাটবদ্ধ হয় তখন ছোট ছোট দুই পা এসে থামে ভদ্রার পাড়ে। গোলপাতার ছায়ার ভেতর দেখা যায় অপুষ্ট অথচ উজ্জ্বল চোখের এক মানবশিশুর অবয়ব। ফেরার টানে উতলা হলে গুনারী হয়ে শিবসার ধারে দাঁড়ায় সে। রাত ফুরানোর আভাস মাত্রই উঠে বসে লাইনের ট্রলারের কাঁকড়া বা মাছের রেণুবোঝাই হাঁড়ি থেকে ছলকে আসা পানিমাখা ভেজা পাটাতনে। বাহাদুরের বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গ্রাম ফকিরকোনায়। লাইনের ট্রলার যায় না এতখানি পথ। কালাবগী বাজারের ঘাট থেকে আবার অপেক্ষা কোনো ডিঙিনৌকার জন্য। বাহাদুর অবশ্য চাইলে সাঁতরেও যেতে পারে এ পথটুকু।
ছবি-১-নিখোঁজ হওয়ার গল্প গোপন রাখে সুন্দরবনের বাহাদুর। ছবি- সংগৃহীত
নিজের নামের কৌলীন্যের তেজ থাকে মানুষের। ‘বাহাদুর’ নামটা তো পাড়াপড়শির কাছ থেকে পাওয়া। আসল নাম ‘তরিকুল শেখ’, যাঁর বয়স এখনো দশের ঘরে। নতুন নাম পাওয়ার পেছনের মাহাত্ম্য অক্ষুণ্ন রাখা আবশ্যক। তবে এ বয়সেই এমন বৈরাগ্যের হেতু জানতে চাইলে হেসে বলে, ফিরতে মন টানে না। মন যে কেন টানে না, সে ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো বয়স তো এখনো ওর হয়নি। তরিকুল আসলে মা হারানো, বাপে তাড়ানো, স্কুল পালানো এক শিশু। অথচ বছর দেড় আগেও ওর গল্পটা এমন ছিল না। অভাব থাকলেও কাঁকড়া আর মাছ ধরে ওর বাবা যে উপার্জন করতেন, তা দিয়ে একটি যৌথ পরিবারের বন্ধন ছিল গোলপাতার ঘরে। ভাটায় নামলে ওর মা মমতাজের ছোট জালে কখনো কখনো উঠে আসত দাঁতিনা বা গনগনে মাছও। সেদিন তরিকুলের পাতে গরম ভাতের আনন্দ।
২০২০ সালের ২১ মে দুপুরে বাতাস ছুটলে আতঙ্কিত গ্রামবাসীর মুখে মুখে ছড়াচ্ছিল, শিবসা-সুতারখালীর কোলে দোল খাওয়া ফকিরকোনা এবার কালাবগী থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। বাস্তবে নদী আর ঝড়ের দাপট ছিল আরও ভয়াবহ। স্থলপথের সঙ্গে এ গ্রামের শেষ সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে সে ঝড়ে। পাশের ঘরের রিনা বেগম আতঙ্ক নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে তরিকুলের মাকে বলছিলেন, নদী আরও বড় হয়েছে। এবার হয়তো বাঁচার সুযোগও পাবে না ফকিরকোনার মানুষ। এর মধ্যে জোয়ার এলে টেনে নিয়ে গেল শিবসার দিকের কয়েকটি ঘর। ভাঙন নয়, যেন চোখের সামনে নদীতে আত্মাহুতি দিল ওদের প্রতিবেশীদের বসতবাড়ি। মৃত্যুর আতঙ্ক সামলাতে না পেরে অপুষ্ট শরীরের তিন সন্তানের মা মমতাজ মৃত্যুর কাছেই পরাস্ত হলেন। ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করলেন। শিশু তরিকুল চোখের সামনে দেখল, ঝড় থেকে ঘর নিস্তার পেলেও মুহূর্তে নাই হয়ে গেল ঘরে থাকার সবচেয়ে আপনজন।
তরিকুলের পিঠাপিঠি বোন মঞ্জিলার বয়স তখন মোটে ১১ বছর। সবার বড় ভাই আর বাবা আছে এ রক্ষা। কিন্তু আদতে রক্ষা হলো না কিছুই। এক মাসের মধ্যে তরিকুলের বাবা বিয়ে করে খুলনা শহরে চলে গেলেন নতুন স্ত্রীকে নিয়ে। বছরে ছয় মাস ইটভাটায় কাজ করতে যাওয়া বড় ভাই বিয়ে করে পৃথক হলেন। গোলপাতার সেই পারিবারিক বন্ধন এবার ছিন্ন হলো সত্যি সত্যি। ঝড়ের পর ফকিরকোনা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেখানে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ কিছুই পৌঁছাল না এখন পর্যন্ত। চিকিৎসাসেবা নেই, বিদ্যালয় নেই সুন্দরবনঘেঁষা এই দ্বীপ গ্রামে। স্থানীয় সংগঠন ‘শিশুদের জন্য আমরা’র উদ্যোগে শুরু হলো ‘আমাদের স্কুল’। আম্বিয়া বেগম নামের একজন মাত্র শিক্ষক সব শিশুকে পড়ান। আয়োজকেরাই বিনা বেতনে তরিকুলকে ভর্তি করে দিলেন স্কুলে। কিন্তু তরিকুলই হলো স্বঘোষিত ক্যাপ্টেন। স্কুল থেকে শুরু করে ফকিরকোনার যেকোনো খবর মুখস্থ রাখে। কেউ এলে সবার হাঁড়ির খবর বলে দিতে পারে গড়গড় করে। অন্য শিক্ষার্থীরা যখন সংকোচে নিজেকে গুটিয়ে রাখে, তরিকুল তখন সবার আগে আগে হাঁটে। অন্যের সমস্যা নিয়েও ওর বিস্তর মাথাব্যথা।
একই রকম অন্যের মুখে আনন্দ দেখে যে নিজেরই আনন্দ হয়, তা বুঝে ফেলেছে এটুকু বয়সেই। দেখা-না দেখা সব গল্প সে বানিয়ে বলেও মুগ্ধ করার চেষ্টা করে অন্যদের। হয়তো হঠাৎ ওর মনে হলো, ডলফিনের গল্প শুনলে মানুষ খুশি হবে। বলে দিল তাঁকে, এই নদীতে সবচেয়ে বড় ডলফিন দেখেছে নিজে। অথবা কাউকে বিস্মিত করার জন্য জানিয়ে দিল, এই সেদিন ও না থাকলে অমুককে কুমির গিলেই নিয়েছিল। যেন টানাটানি করে সে নিজেই কুমিরের মুখ থেকে টেনে বাঁচিয়েছে। তরিকুলের এই সব গল্প শুনে স্নেহশীল জ্যেষ্ঠরা বুঝতে পারে, মনের ভেতরে অন্য কোনো বেদনার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে শিশু নিজেই নিজের। তারা অবাক হওয়ার ভান করে।
প্রশ্রয়ে তরিকুল কখনো কখনো প্রায় ডুবে যাওয়া খেলার মাঠে ফুটবলে একটা গোল দিয়ে আত্মহারা হয়ে গড়াগড়ি দেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে নিজেকে ম্যারাডোনা দাবি করে বসে। আসলে সে অসীম ওই শূন্যতার দিকে তাকিয়ে কল্পনায় মৃত মায়ের কাছ থেকে সার্টিফিকেট আদায় করে কি না সে কথা তরিকুল কখনো ব্যাখ্যা করে না। সামান্য স্নেহ পেলেই বয়সে ঢের বড় কাউকে বলে বসে, আপনার গগলসটা (রোদচশমা) দেবেন? চোখে দিলে সব রঙিন লাগে? ওর অকপট সরল উৎফুল্লতার সঙ্গে যুক্ত হয় সম্ভবকে অসম্ভব করার নানা গল্প।
সুন্দরবন–সংলগ্ন সবচেয়ে কাছের জনবসতিগুলোর একটি এই ফকিরকোনা। ভাটার সময় চাইলে হেঁটেই চলে যাওয়া যায় বনে। জোয়ারে সাঁতরালে বড়জোর ১০ মিনিট। তরিকুল বনের সব গাছ চেনে। অলিগলি, খাঁড়ি, নালার মানচিত্র মুখস্থ। বাড়ির দুপাশে উপচে ওঠে দুই নদী। সুতারখালী বা শিবসা যেকোনোটি ধরে কয়েক মিনিট সাঁতার কাটলেই রহস্যময় সেই বাদাবন। এই বিপুল অরণ্যের স্তব্ধতা দুদণ্ড শান্তি দেয় শিশু তরিকুলকে। মাঝেমধ্যেই সে বনের কাছে আত্মসমর্পণ করে একা একাই ঘুরে বেড়ায়।
অথচ বয়স এখনো ১০ ফুরায়নি শিশুর। খিদেয় পেট বসে থাকে প্রায়ই। মায়ের স্মৃতি মনটাকে পুড়িয়ে খাক করে অথচ মুখের হাসি অক্ষত। সেই হাসিমাখা আনন্দ উজ্জ্বল মুখ আর দুঃসাহসিক সব অভিযানের জন্য ওর নাম দেওয়া হয় বাহাদুর। নাম হিসেবে না নিয়ে সে যেন খেতাব হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই বাহাদুর পরিচয়ে সাহস বেড়েছে লাফিয়ে। অপুষ্ট শরীরের এই শিশুর শরীরের বৃদ্ধিটা এলোমেলো কিন্তু সংবেদনশীলতায় একের পর এক আঘাতে মানসিক পরিণত ভাবটা খুব বেশি। তরিকুল জানে, না ফিরলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মানুষ কেউ নেই তাই সে হারিয়ে যায় প্রায়ই।
এই দীর্ঘ সময় ধরে পর্যটক হয়ে থাকা তো বিনা পয়সায় অসম্ভব। ছোট মুখে একটা চওড়া হাসি দিয়ে জানায়, ছোট মানুষ বলে অন্যদের মতো এত টাকা ওর লাগে না। বাসে, ট্রেনে তো সে আর টিকিট কেটে ঘুরে বেড়ায় না। হয় ইঞ্জিনের সিটটায় বসে অথবা দরজা ধরে চারপাশ দেখতে দেখতে বাতাস লাগায় গায়ে। এভাবে কয়েক দফা নিখোঁজ হয়ে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার পর্যন্ত ঘুরে এসেছে এই বাহাদুর। কখনো কোনো হোটেলে কয়েক দিন সহযোগী হিসেবে কাজ করে। আবার মন ছুটলে ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছায় খুলনা রেলস্টেশনে। মায়ের জন্য হাহাকারটা মুখের হাসি দিয়ে ঢেকে রাখতে সে দক্ষ হয়ে উঠেছে দেড় বছরে। বেশি কষ্ট হলে কালাবগীর ফকিরকোনার জলমগ্ন গোলপাতার ঘরে ফেরার আগে একবার দেখে যায়, নতুন পরিবারসমেত খুলনানিবাসী বাবাকে। তারপর আবার লঞ্চ বা নৌকায় উঠে একটু একটু করে এগিয়ে আসে ভদ্রা হয়ে সুতারখালীর কাছে।
এই নদী ওর মাকে নিয়েছে, উল্টেপাল্টে দিয়েছে পারিবারিক বন্ধন। আম্পানের মতো সব ঝড়কে সে ঘৃণা করে ভীষণভাবে। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতির যে হিসাব হয়, তাতে কখনো স্থান পায় না মানবিক বিপর্যয়ের গল্প। ২০২০ সালের মে মাসে ‘আম্পান’ ঝড়ের পর থেকে আদতে বাস্তবতার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো এক শিশুর নাম বাহাদুর। ঝড় আর জলোচ্ছ্বাস, বন আর নদীতাড়িত জীবনের সে শুধু একটা চিহ্ন।
ছবিটি দেখে নিশ্চয়ই চক্ষু ছানাবড়া অবস্থা আপনার? ভাবছেন এমন জায়গা নিশ্চয়ই দেশের বাইরে কোথাও! ছবিটি আমাদের দেশেরই, সিরাজগঞ্জে। জায়গাটার নাম চায়না বাঁধ।
ভাবুন তো, সবুজ ঘাসের উপর বসে আছেন আপনি, আর দুইপাশে নদী। এমন অসাধারণ জায়গায় একটা বিকেল পার করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সিরাজগঞ্জের চায়না বাঁধ থেকে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর কূল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এই বাঁধ। বাঁধের মূল ফটক থেকে নদীর ২ কিলোমিটার গভীরে চলে গেছে বাঁধের শেষ প্রান্ত। মূল গেট থেকে পিচ ঢালা রাস্তা সহজেই যেতে পারবেন বাঁধের শেষ প্রান্তে।
যমুনা নদীর এই বাঁধে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বেড়াতে আসে। ধীরে ধীরে এটি পরিণত হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্যে। বাঁধে বসে থাকতে ভালো লাগবে, ভালো লাগবে আশেপাশের পরিবেশ উপভোগ করতে। আর নদীতে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তো এক কথায় অসাধারণ! এরপর আপনি চাইলে শহরটা ঘুরে দেখতে পারেন। ছোট শহর। ব্যাটারি চালিত রিকশায় ১ ঘন্টাতেই শেষ করতে পারবেন।
ভ্রমন পিপাসু মানুষ দের কে যদি এই কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে তারা এই কথা অহেতু হাসির ছলে উড়িয়ে দিবে । কারন, ভ্রমন পিপাসু মানুষদের কাছে এই কথা মূল্যহীন । তবুও বলি,
চায়না বাঁধ একটি দর্শনীয় স্থান ।
চায়না বাঁধ অত্যন্ত মনোরম, যা আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে ।
চায়না বাঁধে ভ্রমন করলে আপনি হতাশ হবেন না । এটি আমরা হরফ করে আপনাদের জানান দিয়ে দিতে পারি ।
যে কোন স্থান হতে বাস যোগে, ট্রেন যোগে ও বিমানের মাধ্যমে রাজশাহী যেতে পারেন। তারপর সিরাজগঞ্জ হতে গাজনার বিলে যাওয়ার উপায় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
সিরাজগঞ্জ জেলা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ইজিবাইক/ অটোরিক্সা যোগে চায়না বাঁধে যাওয়া যায়। গাড়ি থেকে নেমেই রাস্তার পাশে চাটমোহর শাহী মসজিদ দেখা যায়।
বগুড়া নগরবাড়ী মহাসড়কের হাটিকুমরুলবাস ষ্ট্যান্ড হতে প্রায় এক কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত হাটিকুমরুল একটি প্রাচীন গ্রাম। এ এলাকা পূর্বে হিন্দু অধ্যষিত ছিল। এখন কয়েকটি হিন্দু পরিবার এখানে বসবাস করার পূর্বে এ গ্রামে হিন্দুদের অনেক প্রাচীন আবাস ইমারত ও মন্দির ছিল। বর্তমানে এখানে ৪ ( চার ) টি হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ লক্ষ্য করা যায়। এ চারটি মন্দিরের মধ্যে নবরত্নমন্দিরটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বর্গকার পরিকল্পনায় ( ৫৫’-৭’’) / ৫৫’-৭ নির্মিতি ত্রিতল বিশিষ্ট এ মন্দিরটি একটি উঁচু প্লাটফর্মের উপর অবস্থিত।মন্দিরের ১ম ও ২য় তলার ছাদের চারকোণে চারটি করে ৮ ( আট ) টি চূড়া বেং সর্বশেষ তলার উ পর একটি চূড়া মোট ৯( নয় ) চূড়া বা রত্ন ছিল। বর্তমানে সব কয়টি চূড়াই বিলুপ্ত। তবে উহাদের ভিতরে কিছু কিছু নিদর্শণ বিদ্যমান। একটি গর্ভগৃহকে কেন্দ্র করে মন্দিরটি ধাপে ধাপে সমম্বয়ে সরু হয়ে উপরে উঠেছে।
গর্ভগৃহের চতুপার্শ্বে আছে টানা বারান্দা। বারান্দার ছাদ বাংলা কুড়ে ঘরের ন্যায় পদ্ধতিতে নির্মিত। নীচ তলার বারান্দাটি উত্তর পূর্ব কোণে একটি ঘূর্নায়মান সিড়ির সাহায্যে মন্দিরের উপর উঠার ব্যবস্থা ছিল। নবরত্ন মন্দিরটি পোড়ামাটির অলংকরণে সমুদ্ধ ছিল।
বর্হিদেয়াল ও খিলানের স্তম্ভের কিছু কিছু নিদর্শণ লক্ষ্য করা যায়। নির্মাণ শৈলী, স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও অলংকরণ দৃষ্টে অণুমিতহয় যে, হাটিকুমরুলসস্থ আলোচ্য নবরত্ন মন্দিরটি উনবিংশ শতকে নির্মিত হয়েছিল।
আমাদের এই উপমহাদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম সভ্যতার ঝাণ্ডা গেড়েছিল কারা? প্রশ্নটির বেশিরভাগ উত্তরই হয়তো হবে হরপ্পা সভ্যতার লোকেরা। কথাটি পুরোপুরি উড়িয়েও দেওয়া যায় না, কারণ প্রাচীন ভারতবর্ষীয় সভ্যতার ইতিহাসে হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারো; দুটি নামই জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। তাই অনেকের ধারণা- হরপ্পা নগরীর মাধ্যমেই এই উপমহাদেশে প্রাচীন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। এটাও ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যদিও তা বেশ পরের ঘটনা।
বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতেই ফিরে যেতে হচ্ছে আজ থেকে প্রায় ১২,০০০ বছর আগে। তখনই সর্বপ্রথম কৃষিকাজের সূচনা হয় মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক উর্বর ভূমিতে। ধীরে ধীরে পৃথিবীতে মানবসভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পাল্টে যায় মানুষের চিরাচরিত জীবন অভ্যাস। প্রাচীন প্রস্তর যুগে পশু শিকার মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন হলেও নব্যপ্রস্তরযুগীয় বিপ্লব ঘটার ফলে মানুষ ঝুঁকে পড়ে কৃষিকাজের দিকে। এর আগে শিকার ধরার জন্য যাযাবরের মতো পৃথিবী চষে বেড়ালেও, কৃষিকাজের তাগিদে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের প্রয়োজন পড়ে। নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের ফলেই সেটা থেকে একসময় গড়ে ওঠে সংঘবদ্ধ জাতি-গোষ্ঠীর। যারা উদ্ভাবনী শক্তির রঙে রাঙিয়েছে প্রাচীন সভ্যতার ধুলোমাখা পথ, যারা সুসংহত সভ্যতার সব্যসাচী রূপকার। পশু শিকার ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু করলেও প্রস্তর যুগের সেই পাথুরে সরঞ্জামাদির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি, বরং শুরু হয় সেগুলোর নিত্যনতুন ব্যবহার। ওই নব্যপ্রস্তরযুগেই, আজ থেকে প্রায় নয় হাজার বছর আগে সিন্ধু উপত্যকার পশ্চিমে গড়ে ওঠে এক গ্রামীণ সভ্যতা, যাকে ‘মেহেরগড় সভ্যতা’ নামে অভিহিত করা হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দ থেকে শুরু হয়ে এই সভ্যতা পৃথিবীর বুকে টিকে ছিল মোটামুটি ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। অনেকের ধারণা, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার খ্যাতিটা হয়ত ‘হরপ্পা সভ্যতা’র গায়ে সেঁটে দেয়া আছে। কিন্তু হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছে এই মেহেরগড় সভ্যতার উপর ভিত্তি করেই। এটি বর্তমানে পাকিস্তানের কোয়েটা, কালাত, সিবি শহরের মধ্যে এবং বোলান গিরিখাতের নিকটে অবস্থিত।
হাজার বছর পর এই অজানা সভ্যতার কথা পৃথিবীর সামনে উঠে আসে ফরাসি স্বামী-স্ত্রী জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ ও ক্যাথরিন জারিজ পরিচালিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দলের মাধ্যমে। তারা পাকিস্তানে আসেন প্রাচীন বসতির খোঁজে। কিন্তু তারা পেয়ে গেলেন এক মিসিং লিংকের সন্ধান! যে মিসিং লিংক উদঘাটন করে দিয়েছে হরপ্পা সভ্যতার আদি রহস্য। ১৯৭৪ সালে বেলুচিস্তানের পশ্চিমে সিন্ধু উপত্যকার কাচ্চি সমভূমিতে তারা এই সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কার করেন। বেলুচিস্তানের ঝোব নদীর দক্ষিণ উপত্যকা থেকে সিন্ধু নদের সমগ্র পশ্চিম অংশ পর্যন্ত এই সভ্যতা বিস্তৃত ছিল। ১৯৭৪ সালে তারা এই স্থান আবিষ্কারের পর ‘আর্কিওলজিকাল সার্ভে অভ পাকিস্তান’ এর সাথে মিলে, ১৯৭৫-১৬ সাল পর্যন্ত একটানা কাজ করে যান। ১৯৮৭-৯৫ সাল পর্যন্ত তারা মনোনিবেশ করেন ‘নাউশারো’ নামক এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে। এরপর ১৯৯৬-২০০০ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে মেহেরগড় সভ্যতার আদ্যোপান্ত জানার উদ্দেশ্যে খননকাজে হাত লাগান তারা।
মেহেরগড় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি টিলা আবিষ্কার করা গেছে। এই টিলা থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংখ্যা ৩২,০০০ এরও অধিক। ৪৯৫ একর ক্ষেত্রফলের প্রাচীন এই সভ্যতার গোড়াপত্তন ঠিক কোন জায়গা থেকে হয়েছিল, তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আনুমানিক ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে ওই স্থানের উত্তর-পূর্ব কোণের ছোট্ট কৃষিনির্ভর গ্রামকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সভ্যতার পথচলা।
গবেষকেরা এই সভ্যতার পর্যায়কালকে মোট ৭টি স্তরে বিভক্ত করেছেন। যার মধ্যে প্রথম তিনটিকে নব্যপ্রস্তরযুগের এবং বাকি চারটিকে তাম্র-যুগের বলে অভিহিত করা হয়। এই সাতটি স্তরে, ভ্রাম্যমাণ পশুপালকের জীবন থেকে শুরু করে নাগরিকতায় উত্তরণের প্রতিটি দশার সুস্পষ্ট বিবরণ বিদ্যমান।
প্রথম পর্যায়:
মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্যায়ের সময় ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫,৫০০ অব্দ পর্যন্ত। বলা যায়, এটি ছিল নব্যপ্রস্তরযুগীয় পর্যায়। এই জায়গায় কৃষিব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে গম ও যব চাষ করা কিছু অর্ধ-যাযাবর জাতির লোকের মাধ্যমে। কৃষিকাজের পাশাপাশি তারা গবাদিপশু পালনও শুরু করেছিল। প্রথমে এলাকাটি ছিল শিকারি ও ভ্রাম্যমাণ পশুপালনের এক অস্থায়ী আবাসস্থল। পরবর্তীতে কৃষিভিত্তিক চর্চার বিকাশ ঘটার মাধ্যমেই এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে ওঠে।
মেহেরগড়ের উর্বর জমি আর চমৎকার আবহাওয়া ওখানকার জীবন অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল।
ঐসময় পশুপালনকে অধিক গুরুত্ব দেয়ায়, গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু, ভেড়া, ছাগল এবং ষাঁড় ছিল অন্যতম। শিকার ধরার জন্য ওরা কুকুরকেও গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত করেছিল। বনের মধ্যে থাকা কিছু প্রাণী এসেছিল মানুষের সাহচর্যে। কৃষিজমিতে জলসেচের জন্য জলাধারে ছোট ছোট ছোট বাঁধ দেয়া হত। কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য শস্যাগার নির্মাণের প্রচলন ছিল সেসময়। এই সভ্যতায় কৃষির বিকাশ লাভ করার পরেই পশুপালনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। কৃষিজ শস্য বহন এবং খাদ্যের জন্যই মেহেরগড়বাসী পশুপালন করত। এছাড়া পশু শিকারও ছিল তাদের অন্যতম জীবিকা।
ঐসময় অধিকাংশ ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হতো কাদামাটির সাহায্যে। কাদামাটি দিয়ে তারা সমান মাপের ইট তৈরি করত। বাড়িগুলো ছিল একাধিক কামরায় বিভক্ত। প্রথমদিকে মেহেরগড়বাসীরা বহু কামরা বিশিষ্ট কক্ষে বাস করতেন, যেগুলোর কোনো দরজা ছিল না। যাতায়াতের পথ ছিল ছাদ। যার সাথে বিশেষ সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, নব্যপ্রস্তরযুগীয় তুরস্কের কাতাল হুয়ুকের বাড়িগুলোর। ঘর উষ্ণ রাখার উদ্দেশ্য অনেক বাড়িতে আগুন জ্বালানো ব্যবস্থা ছিল, যা বর্তমানের ফায়ার প্লেসের সাথে তুলনা করা যায়।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে বেশ কিছু সমাধির হদিস পেয়েছেন। অবাক করা বিষয় হলো, এর ভেতরে সন্ধান মিলেছে ঝুড়ি, জপমালা, কানের দুল, হাড়ের সরঞ্জাম, নীলকান্তমণি, একপৃষ্ঠীয় প্রস্তর কুঠার ইত্যাদি। এছাড়াও পাওয়া গিয়েছে বলি দেওয়া পশুর কঙ্কাল। অর্থাৎ ওই সভ্যতার শুরুর দিকে বলি প্রথা চালু ছিল। সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো দুটো বাড়ির মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান। ঝিনুকের খোল, চুনাপাথর, যাঁতা, হামানদিস্তা, নিড়ানি, কাস্তে, এবং বেলেপাথরে অলঙ্কারের সন্ধানও মিলেছে। সিন্ধু সভ্যতার মতো বিভিন্ন প্রাণী ও মানবমূর্তিও পাওয়া গিয়েছে। গবেষকদের মতে, এই মূর্তিগুলো ভারতীয় ভাস্কর্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
কৃষি-যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রাপ্ত প্রাচীনতম হাতিয়ার হলো বিটুমিন জাতীয় পাথরখণ্ড দ্বারা নির্মিত কাস্তে। তাছাড়া পাথরের নির্মিত কিলনোরা, যাঁতা, হামানদিস্তা, নিড়ানি ও অন্যান্য পাথরের যন্ত্রপাতিও সেই আমলে ব্যবহার করত মেহেরগড়ের বাসিন্দারা।
মেহেরগড়ের সাথে যে দূরবর্তী দেশসমূহের বহির্বাণিজ্য চালু ছিল, সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ, প্রত্নসম্পদের মধ্যে প্রচুর সামুদ্রিক ঝিনুক খুঁজে পাওয়া গেছে, যা মূলত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকেই এখানে আসা সম্ভব। কালক্রমে এই মেহেরগড়েই থিতু হতে চেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এই সভ্যতা। তাই গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতার বলয় থেকে বের হয়ে মেহেরগড় ধীরে ধীরে নগরায়নের পথে অগ্রসর হতে শুরু করে।
দ্বিতীয় পর্যায়:
মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্যায়ের সময়সীমা ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে চলতি কৃষিকাজ এবং পশুপালনের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের পরিবর্তন প্রয়াসী মনোভাবের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন বেশ কিছু সংস্কার ও নতুনত্ব চোখে পড়ে।
এই পর্যায়ের প্রচুর কার্পাস তুলোর বীজের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করা গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, তখনকার মানুষ কার্পাস চাষ করতে জানত। এটিই ভারতবর্ষের তুলো চাষের প্রাচীনতম নিদর্শন। অনুমান করা হয়, এই কার্পাস তুলো দিয়ে তৈরি করা সুতো দিয়ে তারা কাপড় বানাত। বিষয়টি মোটা দাগে এটাও চিহ্নিত করে যে, হরপ্পা সভ্যতার দু’হাজার বছর আগেই মেহেরগড় সভ্যতায় তুলাের চাষ শুরু হয়।
মেহেরগড়বাসীরা ইতিহাস সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করেছে তাদের কুমোর শিল্প দ্বারা। এদিক থেকে তাদের দক্ষতা যে প্রশ্নাতীত, তা বলাই বাহুল্য। তৎকালীন সভ্যতার সুনজর যায় মৃৎশিল্পের দিকে। এজন্য অবশ্য ইতিবাচক প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল কুমোরের চাকা, যার আগমন ঘটে সুদূর সুমের সভ্যতা থেকে। ফলে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে, অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষভাগে জোয়ার আসে এঁটেল মাটির তৈরি দ্রব্যসামগ্রীর নান্দনিক শিল্পকর্মে। চাকা আসার আগে অবশ্য মাটির পাত্রগুলো হাতে তৈরি করা হতো হাত দিয়ে। চাকা আসার পরেই মৃৎশিল্পে একপ্রকার বিপ্লব চলে আসে। মৃৎপাত্রগুলো শক্ত ও টেকসই করার জন্য চুল্লির আগুনে পোড়াত ও তাতে রঙ-বেরঙের প্রলেপ দিত। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য পাত্র ছাড়াও এই সভ্যতার মানুষ নারীমূর্তি, গবাদিপশুর মূর্তি ও খেলনা মাটি দিয়ে বানাত।
তখন প্রচুর পরিমাণে গম, বার্লি এবং তুলোর চাষ হতো। এই বিষয় থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হওয়া যায়, তা হলো- তখনকার মানুষ তৎকালীন সভ্যতায় সেচব্যবস্থার উদ্ভাবন ঘটিয়েছিল। প্রথম পর্যায়ের মতো দ্বিতীয় পর্যায়েও পশুপালন এবং বহির্বাণিজ্য তখনো বহাল ছিল। মৃতদেহের উপরে লাল মাটির সন্ধানও মিলেছে। সময়ের সাথে সাথে যেমন লাশের সংখ্যা কমেছে, তেমনি ক্ষয় হয়ে গিয়েছে মৃতদেহের সাথে দিয়ে দেওয়া অলংকার।
পর্যায় এক, দুইয়ের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় আরেকটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ‘কিলি গুল মুহাম্মদ’ এর সাথে। মেহেরগড় সভ্যতা মৃৎশিল্পের সাথে পরিচিত হবার আগপর্যন্ত সময়কালকে অনেকসময় ‘কিলি গুল মুহাম্মদ পর্যায়’ বলে অভিহিত করা হয়। কিলি গুল মুহাম্মদে সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ অব্দতে।
তৃতীয় পর্যায়:
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত বহাল ছিল এই সভ্যতার তৃতীয় পর্যায়। এই পর্যায়ে কৃষিক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতির ধারা লক্ষ্য করা যায়। কারণ, প্রত্নসম্পদে কর্ষিত শস্যের বিরাট তালিকার খোঁজ পাওয়া গেছে। এই সময়ে নব্যপ্রস্তর যুগের পরিমণ্ডল থেকে বের হয়ে মেহেরগড় সভ্যতা পদার্পণ করে তাম্র-যুগে। নব্য প্রস্তর যুগের অবসান হওয়ার পর ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়। নব্য-প্রস্তর যুগ থেকে ধাতব যুগের উত্তরণ হয়েছিল খুব ধীরে ধীরে। তবে পাথরের ব্যবহার ও গুরুত্ব তখনও অব্যাহত ছিল। তাই এই যুগকে তাম্র-প্রস্তর যুগও বলা হয়। ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত তামার পুঁথি থেকে মনে করা হয় এই সভ্যতার মানুষ তামা গলানোর প্রক্রিয়া আয়ত্ত করতে পেরেছিল। তামার আকরিক থেকে তারা বিভিন্ন সাজসজ্জার অলংকার তৈরি করত। তৃতীয় পর্যায়ে অন্তত ১৪টি পাত্রের সন্ধান মিলেছে, যেগুলো তামা গলানোর কাজে ব্যবহার করা হতো। অর্থাৎ মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্যায় থেকেই যে তামার ব্যাপক ব্যবহারের সূচনা ঘটেছে, এই পাত্রগুলো তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। এছাড়াও এই পর্যায়ে পাওয়া গেছে তামার ছুরি, বড়শি, সূচ, তামার সিলমোহর প্রভৃতি। তামার সিলমোহর দ্বারা বণিকরা নিজেদের পণ্য চিহ্নিতকরণের কাজ করত। ৬০০০ বছরের পুরনো চাকা আকৃতির একটি তাম্র মাদুলি পাওয়া গেছে মেহেরগড়ে। ওই মাদুলি তৈরি করা হয়েছিল খাঁটি তামা থেকে। সভ্যতার বিকাশ, উন্নতি ও বিস্তারের সাথে সাথে বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক হয়ে উঠে আগের থেকে আরও বিস্তৃত।
মৃৎপাত্রের ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতির ছোঁয়া দেখা যায় বহুলাংশে। ওই সময়ের মৃৎপাত্রগুলোতে নানাপ্রকার জ্যামিতিক নকশা, পশু-পাখি, গবাদি পশু এবং গাছপালার ছবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা সভ্যতার উত্তরোত্তর অভ্যুত্থানকেই নির্দেশ করে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন চীনামাটির মূর্তি পাওয়া গেছে মেহেরগড়ে। সভ্যতার প্রথম দিকে তৈরি করা মূর্তিগুলো ছিল শিল্পচাতুর্যহীন, এবং সাদাসিধে রকমের। সময়ের সাথে সাথে মৃৎশিল্পে বাহারি ধরন যোগ হতে থাকে। যেমন, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে চুলের ধরনে আসে বৈচিত্র, সেগুলো বেণী পাকানো থাকে। মূর্তিগুলোর স্তনের আকার বড় হবার পাশাপাশি সম্মুখদিকে প্রলম্বিত হয়ে যায়। অনেক নারী মূর্তিকে কোলে শিশু ধরে রাখতে দেখা গেছে, যাকে ‘মাদার গডেস’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যায়:
খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ পর্যন্ত ছিল চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যায়ের বিস্তৃতি-কাল। এই সকল পর্যায়ে এসে সভ্যতা তার চূড়ান্ত উৎকর্ষে উপনীত এবং পরিণত হতে থাকে। আগের পর্যায়গুলো সাধারণ মৃৎপাত্র তৈরি করা হলেও এই পর্যায়ে তা নির্মাণে আসে নানা বৈচিত্র্য। সময় যত বাড়তে থাকে, মাটির তৈজসপত্রের উপরের ত্রিভুজ-রেখার নকশাগুলো পরিবর্তিত হয় পশু-পাখির দিকে। বৈচিত্র্যময় কারুকার্যের সাথে টেক্কা দিয়ে নানা রঙের ব্যবহারও দেখা যায়, যা তাদের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও মনোভাবের পরিচায়ক। মাটির তৈজসপত্রের উপর সুদৃশ্য নকশার সাথে তারা যোগ করত সামান্য জ্যামিতিক জ্ঞান। তখন জলসেচের জন্য খাল কাটার প্রমাণ পাওয়া যায়।
মেহেরগড়ে নগরায়নের সূচনা হয়েছিল সেই দ্বিতীয় পর্যায় তথা খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে। চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যায় পর্যন্ত তার পরিপূর্ণ প্রকাশ, বিস্তার এবং বিকাশ নজরে আসে। মানুষের জীবনযাত্রার মান, উন্নত রুচির বহিঃপ্রকাশ, রাস্তাঘাট এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অগ্রগতিতে তার প্রতিফলন স্পষ্ট হয়। ষষ্ঠ পর্যায় থেকে সজ্জাকরণের বস্তু হিসেবে পিপুল গাছের পাতার ব্যবহার শুরু হয়। চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যায় পর্যন্ত ছিল মেহেরগড় সভ্যতার সোনালী যুগ। এ সময় মেহেরগড় সভ্যতা ফুলে ফেঁপে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রাণচঞ্চল এবং ব্যাপক পরিসরের। চিত্রকলা এবং ভাষারও যুগপৎ পরিবর্তন ঘটে।
সমাধিগুলোতে মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া তাদের নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী- অলংকার, হাতিয়ার, নীলকান্তমণি, এবং পালিত পশুর উপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করে যে, মেহেরগড় সভ্যতায় সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের অস্তিত্ব ছিল এবং একইসাথে তারা ছিল মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী। মৃতদেহ সৎকারের আগে গেরুয়া মাটি ব্যবহার করা হতো। মৃতদেহ সমাধিস্থ করার রীতি এবং মৃতদেহের সঙ্গে দেয়া মূল্যবান সামগ্রীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ভিত্তিতে মেহেরগড় সভ্যতার সামাজিক বৈষম্যের দিকটিই স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলে। এছাড়াও শস্য মজুদ রাখার পদ্ধতি, তাদের ব্যবহৃত হস্তশিল্পের সামগ্রী প্রভৃতির পার্থক্য থেকেও সমাজে শ্রেণীবিভাজন বা বৈষম্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই যুবতীর সমাধিক্ষেত্র থেকে বেলনাকার নীলকান্তমণির ছোট মালা উদ্ধার করা গেছে, যা এসে থাকতে পারে মেহেরগড়ের ১০০০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর বাদাকশান থেকে। আরও পাওয়া গেছে চাকতি আকৃতির একটি ঝিনুকের মালা, যা আনা হয়েছিল ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ‘ম্যাকরান উপকূল’ থেকে। মায়ের পেটে ভ্রূণ যে অবস্থানে থাকে, তাকে ঠিক সেভাবেই দাফন করা হয়েছিল, পশ্চিমমুখী করে। তার পায়ের কাছে ছয়টা বাচ্চা ছাগলের হাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে যাতে তিনি পশুপালন করতে পারেন, সেজন্যই এই ব্যবস্থা।
মেহেরগড় থেকে দুই ধরনের সমাধিক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। যে সমাধিগুলোতে শুধু একজন মানুষকে সমাহিত করা হয়েছে সেগুলোকে সংকীর্ণ ও অপ্রশস্ত মাটির দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। আর যেগুলো গণকবর, সেগুলো ছিল মাটি-ইটের দেয়াল সম্মিলিত। প্রতিটি গণকবরে লাশের সংখ্যা গড়ে ছয়টি করে। গণকবরে লাশগুলো শোয়ানো হতো পূর্ব থেকে পশ্চিমে। বৃহদাকার ঘড়াতে শিশু কংকালের হাড়ের সন্ধানও মিলেছে, যা আনুমানিক ৪০০০-৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের।
২০০১ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, এই সভ্যতার লোকেরা আদি দন্তচিকিৎসা সম্পর্কে জানতো। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এই গবেষণা চালিয়েছিল মূলত মেহেরগড় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত দুজনের দেহাবশেষ নিয়ে। ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার-এ একটি আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়, যেটাতে উল্লেখ আছে, সেই প্রারম্ভিক নব্যপ্রস্তরযুগেই মানুষের দাঁত বাঁধানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে মেহেরগড় সভ্যতায়। প্রাচীন মেহেরগড়ের এক সমাধিস্থল থেকে আবিষ্কৃত নয়জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির এগারোটি বাঁধানো দন্ত-মুকুটের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা আনুমানিক ৫,৫০০ থেকে ৯,০০০ বছর আগের হতে পারে।
উপাসনালয়ের অনুপস্থিতির জন্য অধিবাসীদের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায় না। তবে পোড়া মাটির তৈরি বিভিন্ন মূর্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নারী মূর্তি পাওয়া গিয়েছে যা থেকে মাতৃপূজার বিষয়ে ধারণা করা হয়।
অনেকের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে মেহেরগড়বাসীরা আরও উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে কয়েক কিলোমিটার দূরের শহর ‘নাউশারো’তে চলে আসে। ফলে খালি হয় যায় মেহেরগড়, এবং ওখানেই ইতি টানে সভ্যতাটি। আবার অনেকে দায়ী করেন তৎকালীন প্রতিকূল জলবায়ুকে। ঐতিহাসিকদের অনুমান, মেহেরগড় অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বৃষ্টিপাত কমে যায়। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির ফলে সমগ্র অঞ্চল ধীরে ধীরে মরুভূমির রূপ নেওয়া শুরু করলে মেহেরগড়বাসীরা অন্যত্র সরে যায়। ফলে অঞ্চলটি জনমানবশূন্য হয়ে একসময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আবার অনেক ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন, বন্যা বা ভূমিকম্প এই দুই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে কোনো একটি মেহেরগড় সভ্যতার পতনের জন্য দায়ী।
এই সভ্যতার পতন কেন ঘটেছিল, তার কারণ এখনো অস্পষ্ট। মেহেরগড়বাসীরা অজানা কোনো কারণে নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করে পাঞ্জাবের হাকরা নদীর উপত্যকায় এসে নতুন এক সভ্যতা নির্মাণ করে। এভাবে ধীরে ধীরে তারা হরপ্পা সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায় বলে অধিকাংশ গবেষক মত প্রকাশ করেছেন।
প্রাচীন জনবসতির ব্যাপারে ভারতবর্ষের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা কপালে চোখ ওঠার মতো। তামিলনাড়ুর আত্তিরামপাক্কামে চালানো এক খননকাজে ১৫ লক্ষ বছর আগের হোমো ইরেক্টাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মেহেরগড়ে সভ্যতা বিকাশের পাশাপাশি, ওদিকে গঙ্গা উপত্যকাতেও একটি সভ্যতা ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল। এলাহাবাদের ‘ঝুসি’ অঞ্চলে ৭১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এক সভ্যতার অস্তিত্বের গুঞ্জন উঠে এসেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখানে খননকার্য তেমন বৃহৎ পরিসরে চালানো হয়নি। নইলে এখান থেকেও অনেক অজানা তথ্য উঠে আসতে পারত, যা পাল্টে দিতে পারত পূর্বের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস।
এতদিন সকলের ধারণা ছিল যে, সিন্ধু সভ্যতাই ভারতবর্ষের প্রাচীনতম সভ্যতা এবং হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো ছিল মেসোপটেমিয়ার দূরবর্তী উপনিবেশ। কিন্তু মেহেরগড় সভ্যতার আবিষ্কারই সকল পুরাতন ভোল পাল্টে দিয়েছে। সিন্ধু-পূর্ব যুগেও ভারতবর্ষের মাটিতে বিকাশ ঘটেছ এক উন্নত সভ্যতার। তাই বলা যায়, সিন্ধু সভ্যতার গোড়াপত্তনকারীরা বহিরাগত নয়, বা আফ্রিকা-ইউরোপ থেকে হুট করে চলে আসেনি — তারা ছিল এই অঞ্চলেরই মানুষ। হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো উন্নত নগর সভ্যতা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নয়— মেহেরগড় ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মানব সভ্যতার যে প্রসার ঘটেছিল, হরপ্পা সভ্যতা তারই এক পরিপূর্ণ উজ্জ্বল প্রতিফলন।
নবাব জমিদার বাড়ি ধনবাড়ীর একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নবাব প্যালেস ও বলা হয়। মূলত এর নাম নবাব বাড়ি বা নবাব প্যালেসই ছিল। কিন্তু বাড়িটি জমিদারের হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘জমিদার বাড়ি’ বলেই ডাকতেন। অতঃপর তা স্থানীয়দের কাছে জমিদার বাড়ি বলেই অধিকতর পরিচিতি লাভ করে। তাই ধনবাড়ীর যে কাউকে জমিদার বাড়ি বললেই দেখিয়ে দিবে বাড়িটিতে যাওয়ার পথ। খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর (১৮৬৩-১৯২৯) যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রথম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। তাঁরই অমর কৃর্তি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নওয়াব প্যালেস।
ইতিহাসঃ
নবাব জমিদারবাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই জমিদার বাড়ি খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অমর কৃর্তি। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ লর্ড রোনাল্ডসকে আমন্ত্রণ করার জন্য জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশ লর্ড সে সময় স্টিমার দিয়ে বৈরান নদীর কয়ড়া ঘাটে আসেন। জানা যায়, সে সময় ব্রিটিশ লর্ডকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ৩০টি হাতির বহর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদেশের পরিবেশ-প্রকৃতিতে এককালে যে প্রচুর সংখ্যক বন্যপ্রাণী ছিল এই ঘটনা সেই স্বাক্ষ্যও দিচ্ছে।
নওয়াব আলী চৌধুরীর স্ত্রী ছিল তিন জন। বগুড়ার মেয়ে আলতাফুননাহারকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। আলতাফুননাহার ছিলেন নবাব আবদুস সোবহানের মেয়ে। আবদুস সোবহান ছিলেন বগুড়ার জমিদার। জমিদার নওয়াব আলীর সাথে ঈশা খাঁর বংশেরও কিছু সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তিনি ঈশা খাঁর শেষ বংশধর সাইয়েদা আখতার খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নওয়াব আলীর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন সৈয়দা সাকিনা খাতুন চৌধুরানী। সাকিনা খাতুনের বংশপরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণকারী নওয়াব আলী ১৯২৯ সালে মৃত্যুবরণ করার সময় তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত একমাত্র ছেলে সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা হুমায়রা খাতুনের নাম ওয়াকফ নামায় লিখে যান। এই সৈয়দ হাসান আলীর নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট’। বর্তমানে রিসোর্টটির মালিকানা রয়েছে হাসান আলীর একমাত্র কন্যা সৈয়দা আশিকা আকবরের নামে। যে কারণে এই জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্নগুলো আজও টিকে আছে সুন্দরভাবে। আর রিসোর্টটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছে লাইট হাউস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
দর্শনীয় স্থানঃ
বংশাই ও বৈরান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন জমিদারবাড়িটি অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং কারুকার্যে সত্যিই মনোরম এবং মনোমুগ্ধকর। তবে রিসোর্ট তৈরির পর নবাব প্যালেসে বেড়েছে চাকচিক্য এবং আধুনিকতা। চার গম্বুজবিশিষ্ট অপূর্ব মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই শতাব্দীপ্রাচীন নবাব প্যালেস।
পুরো নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেসটি প্রাচীরে ঘেরা। প্রাসাদটি দক্ষিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দাসংবলিত। ভবনের পূর্বদিকে বড় একটি তোরণ রয়েছে। তোরণের দুই পাশে প্রহরীদের জন্য রয়েছে দুটি কক্ষ। তোরণটি জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী ব্রিটিশ গভর্নরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্মাণ করেন। প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দুটি ছাড়া আরো আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসি চত্বর; যা এখনো আপনি দেখতে পাবেন।
ভবনের দরজা ঠিক মাঝ বরাবর নয়। এর কার্নিশে নানা ধরনের লতাপাতার নকশা আঁকানো। ভবনটিতে রয়েছে চারটি বৃহৎ কক্ষ ও কিছু ক্ষুদ্রাকার কক্ষ।দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদের ভেতরের বেশ কয়েকটি কামরা ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। তা ছাড়া বারান্দাতেও শোভা পাচ্ছে মোগল আমলের নবাবি সামগ্রী, সেগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারেন। মোগল আমলের আসবাবপত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্যালেসকান একেবারে পূর্বদিকে দেখা মিলবে শতাধিক বছরের পুরনো ৩০ বিঘার বিশালাকার দিঘি, যার কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া দায়। দিঘীর পাড়ে রয়েছে ছায়ায় ঘেরা গাছপালার সমারোহ। দিঘীতে শীতকালে নানা ধরনের পাখি আসে। ফলে শীতকালে ভ্রমণে বাড়তি কিছু আনন্দ যোগ হয়ে থাকে। সেখানে দর্শনার্থীদের ঘোরার জন্য রয়েছে দুটি সাম্পান, চড়তে পারেন আপনিও।
তাছাড়া নবাবি কায়দায় পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন গারোদের সংস্কৃতি ও নাচ। এ জন্য আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া এখানে আরো দেখতে পাবেন বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা।
পুরো জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখার পর, বের হয়ে আসলে সামনেই দেখা মিলবে নওয়াব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন’। শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদানের সাক্ষী হিসেবে আজও সুনামের সাথে চলছে ইনস্টিটিউশনটি।
নবাব জমিদারবাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই জমিদার বাড়ি খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অমর কৃর্তি। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ লর্ড রোনাল্ডসকে আমন্ত্রণ করার জন্য জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশ লর্ড সে সময় স্টিমার দিয়ে বৈরান নদীর কয়ড়া ঘাটে আসেন। জানা যায়, সে সময় ব্রিটিশ লর্ডকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ৩০টি হাতির বহর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদেশের পরিবেশ-প্রকৃতিতে এককালে যে প্রচুর সংখ্যক বন্যপ্রাণী ছিল এই ঘটনা সেই স্বাক্ষ্যও দিচ্ছে।
নওয়াব আলী চৌধুরীর স্ত্রী ছিল তিন জন। বগুড়ার মেয়ে আলতাফুননাহারকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। আলতাফুননাহার ছিলেন নবাব আবদুস সোবহানের মেয়ে। আবদুস সোবহান ছিলেন বগুড়ার জমিদার। জমিদার নওয়াব আলীর সাথে ঈশা খাঁর বংশেরও কিছু সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তিনি ঈশা খাঁর শেষ বংশধর সাইয়েদা আখতার খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নওয়াব আলীর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন সৈয়দা সাকিনা খাতুন চৌধুরানী। সাকিনা খাতুনের বংশপরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণকারী নওয়াব আলী ১৯২৯ সালে মৃত্যুবরণ করার সময় তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত একমাত্র ছেলে সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা হুমায়রা খাতুনের নাম ওয়াকফ নামায় লিখে যান। এই সৈয়দ হাসান আলীর নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট’। বর্তমানে রিসোর্টটির মালিকানা রয়েছে হাসান আলীর একমাত্র কন্যা সৈয়দা আশিকা আকবরের নামে। যে কারণে এই জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্নগুলো আজও টিকে আছে সুন্দরভাবে। আর রিসোর্টটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছে লাইট হাউস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
দর্শনীয় স্থানঃ
বংশাই ও বৈরান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন জমিদারবাড়িটি অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং কারুকার্যে সত্যিই মনোরম এবং মনোমুগ্ধকর। তবে রিসোর্ট তৈরির পর নবাব প্যালেসে বেড়েছে চাকচিক্য এবং আধুনিকতা। চার গম্বুজবিশিষ্ট অপূর্ব মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই শতাব্দীপ্রাচীন নবাব প্যালেস।
পুরো নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেসটি প্রাচীরে ঘেরা। প্রাসাদটি দক্ষিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দাসংবলিত। ভবনের পূর্বদিকে বড় একটি তোরণ রয়েছে। তোরণের দুই পাশে প্রহরীদের জন্য রয়েছে দুটি কক্ষ। তোরণটি জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী ব্রিটিশ গভর্নরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্মাণ করেন। প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দুটি ছাড়া আরো আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসি চত্বর; যা এখনো আপনি দেখতে পাবেন।
ভবনের দরজা ঠিক মাঝ বরাবর নয়। এর কার্নিশে নানা ধরনের লতাপাতার নকশা আঁকানো। ভবনটিতে রয়েছে চারটি বৃহৎ কক্ষ ও কিছু ক্ষুদ্রাকার কক্ষ।দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদের ভেতরের বেশ কয়েকটি কামরা ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। তা ছাড়া বারান্দাতেও শোভা পাচ্ছে মোগল আমলের নবাবি সামগ্রী, সেগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারেন। মোগল আমলের আসবাবপত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্যালেসকান একেবারে পূর্বদিকে দেখা মিলবে শতাধিক বছরের পুরনো ৩০ বিঘার বিশালাকার দিঘি, যার কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া দায়। দিঘীর পাড়ে রয়েছে ছায়ায় ঘেরা গাছপালার সমারোহ। দিঘীতে শীতকালে নানা ধরনের পাখি আসে। ফলে শীতকালে ভ্রমণে বাড়তি কিছু আনন্দ যোগ হয়ে থাকে। সেখানে দর্শনার্থীদের ঘোরার জন্য রয়েছে দুটি সাম্পান, চড়তে পারেন আপনিও।
তাছাড়া নবাবি কায়দায় পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন গারোদের সংস্কৃতি ও নাচ। এ জন্য আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া এখানে আরো দেখতে পাবেন বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা।
পুরো জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখার পর, বের হয়ে আসলে সামনেই দেখা মিলবে নওয়াব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন’। শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদানের সাক্ষী হিসেবে আজও সুনামের সাথে চলছে ইনস্টিটিউশনটি।
রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ৮0 টাকা।
যেখানে থাকবেন:
এখানে থাকবেন আপনি নবাবি স্টাইলে। তবে সেটা নির্ভর করবে আপনার সামর্থ্যের ওপর। রয়েছে চার ধরনের আবাসন ব্যবস্থা। মঞ্জিল (মূল রাজপ্রাসাদ), প্যালেস (কাচারি ঘর), ভিলা (২০০ বছরের পুরোনো টিনশেড ভবন) এবং কটেজ (সম্প্রতি নির্মিত টিনশেড বাংলো)। মঞ্জিল এবং প্যালেসের খাট, সোফাসহ সব আসবাবপত্র সেই প্রাচীন আমলের যা নবাবরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু ভিলা এবং কটেজে নবাবদের আসবাবপত্র পাওয়া যাবে না। ভাড়া এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা। দল বেঁধে গেলে পাওয়া যাবে বিরাট ছাড়। তা ছাড়া থাকতে পারেন ধনবাড়ী নওয়াব প্যালেসের অদূরে মধুপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত আদিত্য, সৈকত এবং ড্রিমটাচ নামের তিনটি আবাসিক হোটেলে। এগুলোতে রয়েছে এসি এবং নন এসি রুমের সুন্দর ব্যবস্থা।
কিভাবে যাওয়া যায়:
মহাখালীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-ধনবাড়ী সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। বিনিময়, মহানগর কিংবা শুভেচ্ছা পরিবহনে ২৫০-৩০০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছাতে পারবেন ধনবাড়ী। ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে অদূরেই জমিদার বাড়ী, ইচ্ছে করলে হেঁটে কিংবা রিকশায় পৌঁছাতে পারেন সেখানে।
ট্রেনে ভ্রমন করতে পারবেন সহজেই । ঢাকা থেকে হেমনগর স্টেশনে যেতে ট্রেনে ভাড়া পড়বে চেয়ার কোচে ১৬০ টাকা । হেমনগর স্টেশন থেকে নেমে আপনাকে অটো গাড়িতে যেতে হবে ধনবাড়িতে ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা ।
এছাড়া মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট গাড়িতে যেতে পারেন ধনবাড়ি নবাব জমিদার বাড়িতে I
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে প্রচুর নান্দনিক ইসলামিক স্থাপনা। এসব স্থাপনার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মসজিদ। মসজিদ আল্লাহতায়ালার ঘর। পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণে যে ঘর নির্মিত হয়েছিল, তা হলো মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা। পৃথিবীতে এখনও মসজিদ নির্মিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এসব মসজিদ পবিত্র কাবাঘরকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে করে কুবা পল্লীতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ। পরবর্তীতে তা মসজিদে কুবা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পরে নবী করিম (সা.) মদিনায় নির্মাণ করেন মসজিদে নববী।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমলে মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, দৈনন্দিন ইবাদত-বন্দেগি, সাহাবায়ে কেরামকে ইসলামের বিধি-বিধান শিক্ষাদান, বিচার-আচার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামের বাণী প্রচারসহ নানাবিধ ধর্মীয়, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রয়েছে সুলতানি, মোগল ও বাংলাদেশ আমলের মসজিদ ও স্থাপনা। এসব মসজিদের মাঝে হাল সময়ে নির্মিত টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদটিও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নির্মাণ করা হয়েছে ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এ মসজিদের মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট (১৩৮ মিটার)। যা ৫৭ তলা ভবনের সমান। মসজিদে গম্বুজ আছে ২০১টি। মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এটি হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় উঁচু মিনারের মসজিদ।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত ২০১ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। ২০১৮ সালের শেষ দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে দু’টি হেলিপ্যাড।
ডিজাইন ও কারুকার্যের দিক থেকে মসজিদটি একটি ভিন্ন সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে গড়ে উঠছে। মসজিদের টাইলসসহ ফিটিংসের যাবতীয় শোভাবর্ধনের শৌখিন কারুকার্যখচিত পাথরগুলো বিশ্বের কয়েকটি দেশ ঘুরে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন ঘটে। বিশেষ করে জুমার নামাজে শরিক হতে বহু দূর থেকেও মানুষ আসেন।
বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। ওই মিনারের উচ্চতা ৬৮৯ ফুট (২১০ মিটার)। যা ৬০ তলা ভবনের সমান। তবে এটি ইটের তৈরি নয়। দিল্লির কুতুব মিনার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনার। এর উচ্চতা ৭৩ মিটার বা ২৪০ ফুট।
নির্মাণাধীন অবস্থায়ই ২০১ গম্বুজের মসজিদে ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় শুরু হয়। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর এ মসজিদ কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। এরই মাঝে নিয়মিত নামাজ হচ্ছে, প্রচুর দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে আসেন।
মসজিদের ছাদের মাঝখানের গম্বুজটির উচ্চতা ৮১ ফুট, বাকি ২০০টি গম্বুজ ১৭ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। মূল মসজিদের চার কোণে রয়েছে ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। পাশাপাশি থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার।
১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারবেন একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি। দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত থাকবে ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরিফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালের কোরআন শরিফ পড়তে পারবেন। মসজিদের প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল।
আজান প্রচারের জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হবে উঁচু মিনার। উচ্চতার হিসাবে মিনারটি তৈরি হয়েছে প্রায় ৫৭ তলার সমান অর্থাৎ ৪৫১ ফুট। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দু’টি পাঁচতলা ভবন।
কিভাবে যাবেন :
ট্রেনে ভ্রমন করতে পারবেন সহজেই । ঢাকা থেকে হেমনগর স্টেশনে যেতে ট্রেনে ভাড়া পড়বে চেয়ার কোচে ১৬০ টাকা । হেমনগর স্টেশন থেকে নেমে আপনাকে অটো গাড়িতে যেতে হবে ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদে। অটো গাড়িতে ভাড়া পড়বে ১৫ টাকা ।
এছাড়া মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট গাড়িতে যেতে পারেন ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদে।
প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের ‘ইওর নিউজ আপডেট’ ফিচার বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ফিচারটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী পছন্দনীয় সংবাদ সাজিয়ে দিতো গুগল এবং তা পড়ে শোনানো হতো ব্যবহারকারীকে। সংবাদ বাছাইয়ের কাজটি গুগল করত ব্যবহারকারীর ডেটার ভিত্তিতে।
কিন্তু এখন আর গুগল ব্যবহারকারীর ডেটার ভিত্তিতে সংবাদ বাছাই করে দেবে না। ২০১৯ সালে বাজারে প্রচলন হয়েছিল ‘ইওর নিউজ আপডেট’ ফিচারটির। মূল লক্ষ্য ছিল, অ্যালগরিদমিক অডিও ফিডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ছোট সংবাদ আপডেট দেওয়া।
বিশেষায়িত নিউজ ফিড তৈরিতে ব্যবহারকারীর পছন্দ, অবস্থান, ইউজার হিস্ট্রি ও আগ্রহের মতো তথ্যগুলো আমলে নিতো গুগল এবং ‘লাইসেন্সড’ অংশীদারদের সুনির্দিষ্ট বিষয়ের খবর শোনাত। পরে দীর্ঘ কন্টেন্টও যোগ হয়েছিল গুগলের সেবাটিতে। ‘ইওর নিউজ আপডেট’ বন্ধ করে দেওয়ার খবর প্রথম জানিয়েছে ৯টু৫ গুগল।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইটটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওই ফিচারের ব্যবহারকারীদের মেসেজ পাঠিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করেছে গুগল। এ ছাড়াও ‘গুগল পডকাস্টের’ এক্সপ্লোর ট্যাব থেকেও ফিচারটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের প্রথম ‘উড়ন্ত জাদুঘর’ চালু করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। আজ মঙ্গলবার আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
সৌদি আরব আগামী বৃহস্পতিবার জাদুঘরটি চালু করবে বলে জানানো হয়েছে। উড়োজাহাজে চড়ে এ জাদুঘরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরিদর্শন করতে হবে।
খবরে বলা হয়, রাজধানী রিয়াদ ও প্রাচীন শহর আলউলার মধ্যে উড়োজাহাজে ভ্রমণের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখবেন।
জাদুঘরটি রয়্যাল কমিশন ফর আলউলা ও সৌদির রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সৌদিয়া এয়ারলাইনসের মধ্যকার একটি সহযোগিতামূলক প্রকল্প।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে আলউলায় আবিষ্কৃত নিদর্শনগুলোর প্রতিরূপের (রেপ্লিকা) সংগ্রহ প্রদর্শন করবে জাদুঘরটি।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য উড়োজাহাজে ওঠা যাত্রীরা ‘আর্কিটেক্টস অব অ্যানসিয়েন্ট অ্যারাবিয়া’ নামের ডিসকভারি চ্যানেলের তথ্যচিত্রও দেখতে পারবেন, যেটি চলতি বছর মুক্তি পেয়েছে।
কমিশনের প্রত্নতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গবেষণার পরিচালক রেবেকা ফোটি বলেন, আলউলা আরব উপদ্বীপের একটি লুকানো রত্ন। তাঁরা ধীরে ধীরে এই রত্নের রহস্য আবিষ্কার করছেন। সৌদিয়া পরিচালিত স্কাই ট্রিপের দর্শনার্থীদের সঙ্গে আবিষ্কৃত তথ্য ভাগাভাগি করার জন্য তাঁরা উন্মুখ হয়ে আছেন।
সৌদিয়া এয়ারলাইনসের করপোরেট কমিউনিকেশনসের ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ তাশ বলেছেন, জাদুঘরটি তাঁদের সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে চলমান সহযোগিতারই একটি ধারাবাহিকতা। এর লক্ষ্য আলউলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তুলে ধরা। আলউলাকে একটি পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা।
We use cookies to optimize our website and our service.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.