মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পাম্পেও বলেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) হুমকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংলাপে সম্মত হয়েছে।ব্রাসেলস ফোরামে জার্মান মার্শাল তহবিল নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
পাম্পেও শুক্রবার এ বিষয়ে একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন,‘জার্মান মার্শাল তহবিলের ব্রাসেলস ফোরামের আলোচনা উপভোগ করেছি। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আমাদের মূল্যবোধ ও জীবনযাপন নিয়ে যে হুমকির সৃষ্টি করেছে তা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে।’
এর আগে গত সপ্তাহে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কূটনীতিবিদ জোসেপ বোরেল চীনের বিরুদ্ধে একটি ফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান।
পাম্পেও বলেন, চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ সংলাপের জন্য জোসেপ বোরেলের যে প্রস্তাব ছিল তা গৃহীত হয়েছে। চীনের হুমকির বিষয়ে আমাদের যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
ব্রাসেলস ফোরামের বৈঠকে পম্পেও বারবার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে ভারতের সাথে চীনের মারাত্মক সীমান্ত সংঘাতসহ পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) উস্কানিমূলক সামরিক পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি।
পাম্পেও বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হুমকি মার্কিন জনগণের সুরক্ষাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত কয়েক দশকের মধ্যে এই হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলেও জানান তিনি
অনেক জায়গা থেকে যদিও লকডাউন উঠেছে কিন্তু করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ কারণে অনেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু একটানা ঘরে বসে থাকাও স্বাস্থ্যকর নয়। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে হাঁটা-চলা করতেই হবে। বাড়াতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
যারা নিয়মিত পার্কে কিংবা রাস্তায় একটানা হাঁটতেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছাদে কিংবা বারান্দায় হাঁটার চেষ্টা করছেন। অনেকের কাছ তাই প্রশ্ন, বাইরে হাঁটলে যে সুফল পওয়া যাবে, বারান্দা বা ছাদে হাঁটলে সেটা কতটা কার্যকর হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হালকা গতিতে অনেক ক্ষণ রাস্তায় হাঁটাচলা করলে লাভ নেই। বরং এক মিনিট জোরে তার পর তিরিশ সেকেন্ড আস্তে হাঁটলে, সেটা ছাদ হোক কিংবা বারান্দা, তা অনেক বেশি কার্যকর।
তাদের মতে, দু’মিনিট অত্যন্ত দ্রুত হেঁটে তিরিশ সেকেন্ড বিশ্রাম, এই পদ্ধতি অবলম্বন করে হাঁটতে পারেন। তাদের ভাষায়, একটানা পার্কে কিংবা রাস্তায় ৪০ মিনিট হাঁটার বদলে এটি অনেক বেশি কাজে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাদে কিংবা ঘরে হাঁটার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। যেমন-
১. বয়স্কদের টানা অনেক ক্ষণ হাঁটা ঠিক নয়। এতে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে।
২. হৃদরোগজনিত জটিলতা না থাকলে যে কোনও বয়সের যে কেউ জোরে হাঁটতে পারেন।
৩. হাঁটার সময় স্টপ স্টার্ট পদ্ধতি মেনে চলুন। এর মানে হচ্ছে দ্রুত ঘাম ঝরিয়ে এক মিনিট হেঁটে আবার তিরিশ সেকেন্ড ধীর গতিতে হাঁটুন। এভাবে বাড়ির ছাদে রোজ ১৫ হাঁটলেও তা শরীরের জন্য উপকারী হবে।
৪. যেকোন ব্যায়ামের মূল শর্ত হচ্ছে ঘাম ঝরানো। হাঁটা যে কোনও ভাবে, যে কোনও জায়গায় হতে পারে। রাস্তার বদলে ছাদে বিরতি নিয়ে স্টপ স্টার্ট পদ্ধতি মেনে হাঁটা অনেক বেশি কার্যকর।
তবে আবাসনের ছাদ হলে যদি অন্যরা উঠে তাহলে অনেকের জমায়েত হবার সম্ভাবনা থাকে। তখন ছাদে উঠলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে মাস্ক পরে দ্রুত গতিতে হাঁটার ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরে জোরে হাঁটলে দমবন্ধ হয়ে আসার একটা অনুভূতি তৈরি হতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে যাদের হৃদরোগজনিত জটিলতা, সিওপিডি, হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের এবং বয়স্কদের মাস্ক পরে দ্রুত গতিতে হাঁটা একেবারেই উচিত নয়।
করোনার মহামারী শুরু হওয়ার পর সারা দেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে মানহীন সুরক্ষা পণ্য সরবরাহ করছে, যেগুলোর অধিকাংশ চোরাইপথে বিদেশ থেকে আনা। আবার কিছু পণ্য তৈরি হচ্ছে দেশেও।
নকল ও নিুমানের সুরক্ষা সামগ্রীতে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দফায় দফায় অভিযানেও থেমে নেই এসব মানহীন পণ্যের বেচাকেনা। এ অবস্থায় করোনা মহামারী থেকে দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বস্তুত মাস্ক, স্যানিটাইজার ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী মানহীন হলে জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ যারা না জেনে নকল পণ্য ব্যবহার করে থাকেন, স্বাভাবিকভাবেই তারা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন মনে করেন না।
নকল পণ্য ব্যবহারকারী কোনো ব্যক্তি ভাগ্যক্রমে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কাজেই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সম্পৃক্ত মানহীন কোনো পণ্য যাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বা আমদানি করতে না পারে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
উদ্বেগের বিষয়, একবার ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ করে তা রিসাইকেল করে পুনরায় বিক্রি করাও হচ্ছে। হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থান থেকে এসব সামগ্রী সংগ্রহ করে পুনরায় বাজারজাত করছে একটি চক্র। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে জনস্বাস্থ্যের জন্য কী মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী করোনারভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী, মাস্ক, স্যানিটাইজার, ইত্যাদি ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ভারত সরকার ৫৯টি চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
উনপঞ্চাশটি মোবাইল অ্যাপের তালিকায় রয়েছে টিক টক-এর মত ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার চীনা অ্যাপ টিক টক, এছাড়াও উইচ্যাট এবং শেয়ারইট।
ভারতে টিক টকের বিশাল বাজার রয়েছে।
ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে ভারত সরকার দেশটির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করেছে।
ভারত সরকার বলছে এই পদক্ষেপ ভারতের কোটি কোটি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর স্বার্থ রক্ষা করবে।
ভারতের সাইবার স্পেসের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে পিআইবির টুইটে জানানো হয়।
লাদাখে বিরোধপূর্ণ চীন ভারত সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে ১৫ই জুনের হাতাহাতি সংঘর্ষে ভারতের অন্তত বিশজন সৈন্য মারা যাবার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঐ সংঘর্ষের ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগেই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কমান্ডাররা “দু দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো মেনে সীমান্ত এলাকায় কোনরকম বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি” করতে সম্মত হয়েছিলেন।
সংঘাতের পর, এবং সংঘাত পরবর্তী পাল্টাপাল্টি দোষারোপের পর দুই দেশই যখন প্রকাশ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে, তখন ভারতের দিক থেকে চীনা মোবাইল অ্যাপগুলো বন্ধের ঘোষণা এল।
ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রামে আঘাত হেনেছে পঙ্গপাল। শনিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা অথবা রবিবার (২৮ জুন) সকালে পঙ্গপাল দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পঙ্গপাল তাড়াতে সাইরেন ব্যবহার করছে গুরুগ্রাম প্রশাসন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাসার জানালা বন্ধ করে রাখতে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের কীটনাশক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুরুগ্রামে প্রবেশ করে পঙ্গপাল। ঝাঁকটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছে।
গুরুগ্রামের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জানান, পঙ্গপাল শহরের পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে যাচ্ছে। সেটি খুব সম্ভবত দিল্লিতে প্রবেশ করবে।
ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রামে আঘাত হেনেছে পঙ্গপাল। শনিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা অথবা রবিবার (২৮ জুন) সকালে পঙ্গপাল দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পঙ্গপাল তাড়াতে সাইরেন ব্যবহার করছে গুরুগ্রাম প্রশাসন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাসার জানালা বন্ধ করে রাখতে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের কীটনাশক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুরুগ্রামে প্রবেশ করে পঙ্গপাল। ঝাঁকটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছে।
গুরুগ্রামের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জানান, পঙ্গপাল শহরের পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে যাচ্ছে। সেটি খুব সম্ভবত দিল্লিতে প্রবেশ করবে।
রাজধানীর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ রওয়ানা দিয়েছে।
সোমবার (২৯ জুন) সকালে লঞ্চ ডুবির খবর পাওয়ার পরই জাহাজটি যাত্রা শুরু করে। তবে নিখোঁজদের উদ্ধারে ইতিমধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বুড়িগঙ্গায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে।
এর আগে, এদিন সকালে বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটের মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ৫০/৬০ জন যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সকাল নয়টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দুই তলা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক ছোট মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়।
স্থানীয়দের দাবি ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন।
করোনাভাইরাস একেকজন মানুষের দেহে এত বিচিত্র এবং ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে যে তা বিজ্ঞানীদের রীতিমত বিস্মিত করছে।
আক্রান্ত কেউ কেউ অত্যন্ত দ্রুত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কারো দেহে দেখা যাচ্ছে খুবই মৃদু উপসর্গ। আবার অনেকের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে নিশ্চিত হবার পরও কোন উপসর্গই দেখা যাচ্ছে না।
তাই এই প্রশ্নটা বারবারই ঘুরে ফিরে আসছে – করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হবার ঝুঁকি কার ক্ষেত্রে কতটা?
এটা কি আগে থেকে অনুমান করা এবং সে অনুযায়ী হুঁশিয়ার হওয়া সম্ভব? এ নিয়ে বহু গবেষণা চলছে, প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করছেন। সম্প্রতি কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে, মানুষের রক্তের টাইপ বা গ্রুপের সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির সম্পর্ক আছে। বিজ্ঞানীরা প্রথম দিকে রক্তের টাইপের সাথে কোভিড সংক্রমণের সম্পর্ক আছে বলে মনে করতেন না। তবে এখন গবেষকরা দেখছেন, এ দুটির মধ্যে সম্পর্ক আছে এবং এ, বি বা এবি টাইপ রক্তবিশিষ্ট লোকদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বা গুরুতর অসুস্থ হবার ঝুঁকি বেশি ।
এমনকি কোভিড-১৯এ কার মৃত্যুর ঝুঁকি কতটা – তার আভাস পেতেও সহায়ক হতে পারে রক্তের টাইপ।
রক্তের টাইপের সাথে কোভিড-১৯ রোগ কীভাবে সম্পর্কিত?
বিবিসির বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা হেলেন ব্রিগস লিখছেন, টুয়েন্টিথ্রিএ্যান্ডমি নামে একটি জেনেটিক টেস্টিং কোম্পানির চালানো একটি গবেষণাতেও বলা হচ্ছে, যাদের রক্তের টাইপ ‘ও’ – তাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ হবার সম্ভাবনা – এ, বি বা এবি টাইপের রক্তের লোকদের চাইতে ৯ থেকে ১৮ শতাংশ কম। সাত লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, টেস্টে কোভিড পজিটিভ ফল পাওয়া গেছে এমন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রক্তের টাইপ ‘ও’ এমন লোকের সংখ্যা সবচেয়ে কম।
কোভিড পজিটিভদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন ‘এবি’ টাইপ রক্তের অধিকারীরা। এই গবেষকরা দেখেছেন. করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বয়স, লিঙ্গ, ওজন, জাতিগত বা নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্য এবং আগে থেকে থাকা স্বাস্থ্য সমস্যা – এগুলো বিবেচনায় নেবার পরও, কোভিড সংক্রমণে ঝুঁকির ক্ষেত্রে রক্তের টাইপের ভূমিকা একই থাকছে।
গবেষকরা অবশ্য বলেছেন তাদের এই জরিপ এখনো প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।
স্পেন, ইতালি ও চীনে চালানো জরিপেও একই রকম আভাস:
তবে অন্য একাধিক জরিপেও রক্তের টাইপের সাথে কোভিড সংক্রমণ কত মারাত্মক হবে তার একটা সম্পর্ক দেখা গেছে। গত সপ্তাহেই ইতালি ও স্পেনে চালানো জেনোমওয়াইড এ্যাসোসিয়েশনের চালানো এক জরিপে বলা হয়- করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের রক্তের টাইপ ‘এ’ – তাদের অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হবার সম্ভাবনা বেশি।
মার্কিন দৈনিক দি নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, মানুষের জিন, রক্তের টাইপ এবং কোভিড-১৯ – এগুলোর মধ্যে পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক প্রথম চিহ্ণিত করে ইউরোপের একটি জরিপ। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ইতালি ও স্পেনের ৭টি হাসপাতালের ১,৯৮০ জন রোগীর ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘এ’ টাইপ রক্তের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণে অসুস্থ হবার ঝুঁকি বেশি, এবং ও টাইপের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম বলে দেখা গেছে। বলা হয়, যাদের রক্তের টাইপ এ পজিটিভ – তাদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটর দরকার হবার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বেশি।
এর আগে চীনে চালানো একটি জরিপেও এমন তথ্য পাওয়া যায়। মেডআরকাইভ অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত ওই জরিপে বলা হয়, উহান ও শেনঝেনের তিনটি হাসপাতালের ২,১৭৩ জন করোনাভাইরাস রোগী এবং আক্রান্ত হয়নি এমন লোকদের উপাত্ত তুলনা করে দেখা গেছে, এ টাইপ রক্তের লোকদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি।
সেখানেও দেখা যায় ‘ও’ টাইপ রক্তের মানুষদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম।
সাবধানতা কমানোর জন্য এ জরিপকে ব্যবহার করবেন না :
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় – তা পালন না করার জন্য এসব জরিপকে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেরি কুশম্যান বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে এমন কথা দেখা গেছে যে একটি পরিবারের যে সদস্যের রক্তের টাইপ ও – তাকে কেনাকাটা করার জন্য দোকানে পাঠানো উচিত কিনা। “
“কিন্তু কারো রক্তের টাইপ ‘ও’ বলে তাকে কম সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে – এমন চিন্তা করা কারোরই উচিত হবে না। আমরা চাই না যে কারো রক্তের টাইপ ‘ও’ বলে সে নিজেকে সুরক্ষিত ভাববে – এমন ধারণা তৈরি হোক।“
এই গবেষণাগুলোর সাথে জড়িত বিজ্ঞানীরা বলেছেন, রক্তের টাইপই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির পেছনে প্রধান কারণ কিনা, বা এর পেছনে অন্য কোন জেনেটিক উপাদান কাজ করছে কিনা – তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রক্তের টাইপ নির্ধারিত হয় বংশানুক্রমিকভাবে :
মানুষের রক্তের টাইপ প্রধানত: চারটি – এ, বি, এবি এবং ও।
প্রত্যেকের রক্তের টাইপ নির্ধারিত হয় তার পিতামাতার থেকে পাওয়া জিনের মাধ্যমে।
করোনাভাইরাস সংক্রমিত কিছু লোকের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া এবং অন্য কিছু লোকের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ হওয়া – এর পেছনে কোনো জেনেটিক কারণ কাজ করছে কিনা তা সম্প্রতি অনেকগুলো গবেষণা চালানো হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানব জেনোমের দুটি বিন্দুতে যে পার্থক্য দেখা যায় – তার সাথে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শ্বাসতন্ত্র বিকল হয়ে যাবার বর্ধিত ঝুঁকির সম্পর্ক আছে।
এই দুটি বিন্দুর একটি এমন কিছু জিন আছে যা মানুষের রক্তের টাইপ নির্ধারণ করে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের রহস্য নিয়ে নতুন ভাবনা :
রিপোর্টে বলা হয়, ওই জরিপটি অন্য কিছু দিক থেকেও ছিল বিস্ময়কর।
বলা হয়, মানুষের দেহকোষের বাইরের দিকে থাকা এ সি ই টু নামে একটি প্রোটিনের সাথে নিজেকে আটকে দিয়ে করোনাভাইরাস কোষের ভেতরে প্রবেশ করে।
কিন্তু যারা কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন – তাদের ক্ষেত্রে এ সি ই টু-র জেনেটিক পার্থক্য কোন ভূমিকা রাখেনি বলে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন।
“তার মানে হলো, যেসব দিকগুলোর দিকে আমরা অপেক্ষাকৃত কম নজর দিয়েছি হয়তো সেগুলোই কোভিড-১৯কে জীবনাশংকা তৈরির মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে” – বলেন আন্দ্রে ফ্রাংক, যিনি এই জরিপের অন্যতম প্রণেতা, এবং জার্মানির কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জেনেটিক বিশেষজ্ঞ।
বিজ্ঞানীরা এর মধ্যেই দেখেছেন যে আক্রান্তদের বয়স, এবং আগে থেকেই হাঁপানি, হৃদরোগ, বা ডায়াবেটিসের মত স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল এমন লোকদের কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরো দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে নারীদের চাইতে পুরুষরা বেশি মারা গেছেন।
কিছু জরিপে জাতিগত ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যও ঝুঁকি বাড়ায় বলে দেখা গেছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মারা যাবার ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গদের চাইতে বেশি।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সোয়া লাখ এবং সংক্রমণ মৃতু্য দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসের ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণের কারণে এখন ঢাকার বাইরে?ও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচুর রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই হাজারও মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় মারাত্মক চাপে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
দেখা যাচ্ছে, প্রায়ই ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ মানুষ মারা যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনেও বলা হচ্ছে, প্রতিদিনই হাসপাতালের বাইরে বাড়িতে মারা যাচ্ছেন বেশকিছু রোগী।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠছে।
গত সপ্তাহে খুলনায় ৫০ বছর বয়সী মোজাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার।
মৃতের বোন মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই তাকে ভর্তি না করায় একপর্যায়ে আমার ভাই তার ছেলের কোলে মৃতু্যবরণ করেন।’
ঢাকার বাইরে স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ বাড়ছে : আইইডিসিআর’র তথ্যে দেখা যায়, খুলনায় গত তিন সপ্তাহে কোভিড-১৯ রোগী এক হাজারের বেশি বেড়েছে।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শারমিন ইয়াসমিন বলেন, রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে এখন স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ বাড়ছে।
‘ঢাকার বাইরে যে রোগীরা সংক্রমিত হচ্ছে, যেমন-চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটে কিন্তু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই অনুপাতে কিন্তু সেখানকার হসপিটাল ফ্যাসিলিটি কম।’ ইয়াসমিন বলেন, এখন ক্রিটিক্যাল রোগীরাই কেবল হাসপাতালে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় সেবা চাহিদা মতো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি পরিসংখ্যান দেই, ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অ্যাকটিভ কেইস ৭০ হাজারের বেশি। এর ৫ শতাংশের যদি আইসিইউ সুবিধা প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা সাড়ে তিন হাজার রোগী। আমাদের দেশে কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ আছে ৩৪০টি, যা এই পরিমাণ রোগীর অনুপাতে চাহিদার মাত্র ৯.৫%।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া ঢাকার বাইরে কিন্তু এই সুবিধা অতটা নেই এবং ডায়ালাইসিস সুবিধাও নেই। ক্রিটিক্যাল রোগীদের কিন্তু ডায়ালাইসিস সুবিধাটা দরকার হবে এবং এটা কিন্তু চিকিৎসার মধ্যেই পড়ে। সেটা না পেলে কিন্তু রোগীরা মারা যাবে।’
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকটাপন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ থেকে এখন বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে উচ্চচাপে অক্সিজেন সরবরাহ করা। ক্রিটিকাল রোগীদের জন্য জীবন রক্ষা করতে পারে এই ব্যবস্থা।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেশের মাত্র ২৩টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। বাকি হাসপাতালে চাহিদা পূরণের জন্য রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার।
আগামী দুই মাসের মধ্যে সব হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তাদের তথ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগের বেশি এখন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর একেবারে গুরুতর অবস্থা না হলে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে সারাদেশে এই পর্যায়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ আছে ১১ হাজারের মতো হাসপাতাল বেড।
তবে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই এখন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও বাস্তবতা হলো; এই নির্দেশনা অনুযায়ী, সব হাসপাতাল এখনো প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি।
ডা. শারমিন ইয়াসমিন নিজেও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
তিনি জানান, তাদের কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসান দাবি করেন, এখন দেশের সব হাসপাতালে করোনা বেড ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিলস্নার মতো অধিক সংক্রমিত এলাকা এমনকি ঢাকার সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
ঢাকার বাইরে সরকারি দুই-একটি হাসপাতালের রোগীদের মেঝেতে রেখেও চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই ছাড়পত্র দিয়ে নতুন রোগী ভর্তির ঘটনা ঘটছে।
সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বহু মানুষকে
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অভিজ্ঞতায়ও পাওয়া যাচ্ছে সংকটের চিত্র। হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি, আমরা একটি বেডও এখন রাখতে পারছি না। ইতোমধ্যেই হাসপাতালের যে শয্যাসংখ্যা ছিল-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশই কোভিড এবং সন্দেহজনক কোভিড রোগীর জন্য বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকি অংশে সাধারণ রোগী এবং সাধারণ রোগীর মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ যারা নানা রোগে ভুগছে, বাসায় থাকতে পারছে না, তারা আসছে। তাদের জন্য কিন্তু স্থান সংকুলান করতে পারছি না আমরা। আমাদের হাসপাতালে অন্তত বলতে পারি কোনো বেড ফাঁকা যাচ্ছে না।’
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা কতটা চাপের মুখে সেটি নিয়ে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি এভাবে বলতে পারি, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সামর্থ্যের সর্বশেষ সীমানা অতিক্রম করেছে। এ জন্যই মানুষ কিন্তু হাসপাতালে শয্যা পাচ্ছে না, জায়গা পাচ্ছে না, চিকিৎসা পাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত, প্রচুরসংখ্যক মানুষ এখন সেবা না পেয়ে অবহেলার শিকার হচ্ছে, বাড়ি ফিরে যাচ্ছে এবং কেউ কেউ মৃতু্যবরণ করার মতো ঘটনা ঘটছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে ৬৫৪টি সরকারি এবং ৫০৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় রোগীর চাপ ও আতঙ্কে সাধারণ রোগীরাও অতি জরুরি না হলে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
জরুরি বিভাগে হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঢাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে কারও কারও অভিজ্ঞতা থেকে জানা যাচ্ছে।
ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগের চিকিৎসা
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারিতে সংকট তৈরি হয়েছে সাধারণ রোগের চিকিৎসায়।
কিছু কিছু হাসপাতালে ঘোষণা দিয়েই কয়েকটি রোগের চিকিৎসা বন্ধ রেখেছে বলে জানা যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে একেবারে জরুরি না হলে খুব কম রোগীরাই হাসপাতালে যাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে সার্বিক চিকিৎসাসেবায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কতটা হচ্ছে, সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সমন্বয়টা যথাযথ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এর আগেও নানাভাবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজ জেলা, মহানগরভিত্তিক করা উচিত, যেখানে খোঁজ নিলে জানা যাবে, কোন হাসপাতালে কয়টি বেড খালি রয়েছে এবং রোগীটি কোনদিকে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম একটি ব্যবস্থা যদি করা যেত, তাহলে আমার মনে হয়, আমাদের হাসপাতালের যে শয্যাসংখ্যা, যে আইসিউ এবং হাইফ্লো অক্সিজেনের যে ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে, সবগুলোকে আমরা শতভাগ কাজে লাগাতে পারতাম এবং এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘোরার জায়গাটি কমে আসত।’
করোনাভাইরাস মহামারিতে আরেকটি বড় সংকট দেখা দিয়েছে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ আক্রান্ত হওয়ার কারণে।
ডক্টরস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের তথ্যে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৪৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন।
এর মধ্যে ৬০ জন চিকিৎসকের মৃতু্য হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৭৬ জন।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতির সামাল দিতে সবরকম চেষ্টা এবং ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার বলেন, মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চেষ্টার ত্রম্নটি নেই।
যেখানে যা করা প্রয়োজন, সেটি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি কন্ট্রোলরুমে ফোন করলে কোথায় গেলে আইসিইউ ফাঁকা পাওয়া যাবে বা কোন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে, সে ব্যাপারেও পরামর্শ এবং সেবা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমাদের রোগীর সংখ্যা কিন্তু এখন বাড়ছে। কোভিড-নন-কোভিড সবরকম রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমরা আলাদা করে কোভিড, নন-কোভিড ভাগ করেছি। যারা অসুস্থ, তারা ভর্তি হচ্ছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন। সবরকম সেবাই কিন্তু দুটি পাশাপাশি আমাদের চলছে।’
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে এবং জানাচ্ছে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা দরকার।
এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকা সর্বোচ্চ রোগীর তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে যে পরিমাণ টেস্ট করা হচ্ছে, এর ২০-২৩ শতাংশ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
দেশব্যাপী ৬৬ দিন লকডাউনের পর মহানগরজুড়ে ২০ মিলিয়ন মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ার পর, গ্রাহকের সংখ্যা ও চাহিদা কমে গেছে। আগে কোনোকিছু পছন্দ হলেই মানুষ তার সাধ্যানুযায়ী কিনলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন মানুষ অতিপ্রয়োজনী পণ্য ছাড়া আর কিছু কিনছে না। স্বাস্থ্য পণ্য, মুদি এবং নিত্যদরকারি কিছু আইটেম ছাড়া রাজধানীর অন্যান্য ব্যবসাগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসায় বিক্রি কমেছে প্রায় ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি চাকরি ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রেই বেতন কাটা ও ছাঁটাইয়ের প্রাথমিক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মার্কেটে। ফলে রাজধানীকেন্দ্রিক এসব ব্যবসার উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোও কঠিন সময় কাটাচ্ছে। আপতকালীন অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও ক্রেতাদের বড় একটা অংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির জন্য মার্কেট আসছেন না।
রাজধানীর পল্টন গার্লস স্কুল রোডের একটি ছোট রেস্তোরাঁর মালিক রাসেল। ৮০ দিনের বিরতি শেষে গত সপ্তাহে তা খোলার পর যে টাকা বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে কর্মচারীদের পাওনাই মিটবে না বলে জানান রাসেল। তিনি বলেন, আগে দিন শেষে ১৪-১৫ হাজার আয় হতো। কর্মীদের বেতন দেয়ার পর বেশ ভালো লাভ থাকত। তবে এখন দিনের শেষে যদি ১০০০ টাকা থাকে তাহলেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।
আবদুলস্নাহ রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় ফুটপাতে ‘নকশী গল্প’ নামে গ্রামীণভাবে তৈরি এম্ব্রয়ডারি বিছানার চাদর বিক্রি করেন। তিনি মহামারির আগে প্রতিদিন ১০-১২টা বিক্রি করলেও গত সপ্তাহে মাত্র ২টি বিক্রি করেছেন।
রাসেল ও আবদুলস্নাহর মতো বড় বড় দোকান, কর্পোরেট শোরুম এবং বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা একইভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, কোভিড-১৯-এর প্রতিকার না পেয়ে এমনিতেই মানুষ খুব চিন্তিত। জীবন বাঁচাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনের বাইরে কোনো কিছু না কেনাই গ্রাহককে নিরুৎসাহিত করার পক্ষে যথেষ্ট। প্রায় ৮০% দোকানের দরজা খোলা তবে গ্রাহকের উপস্থিতি খুব কম। বিক্রি না থাকার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাই দায়।
হেলাল উদ্দিন অনুমান করেছেন যে, দেশজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ দোকানের মধ্যে বেশিরভাগই তাদের ব্যয়ের অর্থই উপার্জন করতে পারছে না। যা নিশ্চিতভাবে এক কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। হেলাল উদ্দিনের মতে চাহিদা হ্রাস পাওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা এবং দ্বিতীয় কারণটি ভীতিজনক। তা হলো মানুষের আয় কমে যাওয়া।
দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের অধিকাংশই শহর ছেড়ে চলে গেছে। পরিবহণ সেক্টর হাজার হাজার শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শ্রমিকরা প্রতিদিনের মজুরির জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। রাইড শেয়ারিং মাধ্যমে জীবিকা উপার্জনকারীদের বেশ বড় একটা অংশ বেকার হওয়ায় ইতোমধ্যে তারা রাজধানী ত্যাগ করেছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একজনের ব্যয় অন্যজনের জন্য আয়। আয় হারানো বা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য লোকেরা তাদের অর্থ ধরে রাখে যার ফলস্বরূপ কর্পোরেট উৎপাদনকারী বা সাধারণ ব্যবসায়ী সবাই খারাপ সময় পার করছে।
কর্পোরেট চাহিদার পতনের ফলে তারা বেতন কাটাসহ কর্মীদের ছাঁটাই করছেন। ব্যয় কমানোর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে লড়াই করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এমনকি অর্থনীতির চালিকাশক্তির উৎস ব্যাংকগুলোতেও কর্মীদের বেতন কমানোসহ ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
পর্যটন ও আতিথেয়তা, রেস্তোরাঁ, চিকিৎসা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত ব্যবসায়িক খাতগুলো মহমারিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জুনের প্রথম সপ্তাহে মিরপুরের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন তার ৪টা রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন। তবে বিক্রি কম হওয়ায় তাকে তিনটিই বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
বাংলাদেশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সুইটমিট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আনোয়ার হোসেন বলেছেন, করোনাভাইরাস ভয় এবং আর্থিক সংকট উভয়ই কম বিক্রির প্রধান কারণ। লোকসানের কারণে বড় বড় রেস্তোরাঁগুলো আবার চালু হচ্ছে না ফলে কয়েক হাজার শ্রমিক কোনো আয় ছাড়াই রয়েছেন।
তিনি বলেন, ১০% মাঝারি বা বড় রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে শপিংমল এবং বাজারগুলো সেফটি প্রটেকশনসহ তাদের দরজা খুলেছে, তবে বিক্রি ৭০%-৯০% হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান জানান, ইদ-উল-ফিতরের আগে মাত্র ১২-১৫% ফার্নিচার বিক্রি হয়েছিল। এখন এটি ১০%-এরও কম। বেশিরভাগ মানুষের আয় কমে যাওয়ায় নতুন আসবাবপত্র কেনার পরিস্থিতিতে তারা নেই। যারা কিনছে একান্ত বাধ্য হয়েই কিনছে।
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলের কসমেটিকস বিক্রেতারা তাদের বিক্রয় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাও করছেন।
এদিকে কারওয়ান বাজারের পাইকাররা জানান, মুদি পণ্যের বিক্রয়ও নিম্নমুখী। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারের চাঁদপুর স্টোরের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই মহামারিকালীন সময়ে বিবাহ বা পারিবারিক জমায়েতের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান নেই, লোকেরা আগের মতো মুদি জিনিস কিনে না।
মুদি দোকানের জন্য রেস্তোরাঁগুলোর অর্ডার কমে গেছে এবং তার বিক্রয় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তিনি অনুমান করেন যে তার নিয়মিত গ্রাহকদের ২০%-২৫% এখন শহরে নেই।
মহানগরে মেঘনা গ্রম্নপ, তেল, চিনি ও ময়দার মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বড় একটা অংশ সরবরাহ করে। তবে লকডাউনের পরে এসব পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করেছে মেঘনা গ্রম্নপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা। তারা জানান, এসব পণ্যর চাহিদা ৩০% কমে ৪০%-এ নেমেছে। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী ইস্পাত বিক্রয় কমেছে এক-চতুর্থাংশ।
নতুন করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বকেই বদলে দিচ্ছে। সমাজ ও অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাস বদলে দিচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিকে। পৃথিবীর নেতৃত্বের ব্যাটন কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে দোলাচল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল দ্বিমেরু বিশিষ্ট বিশ্ব রাজনীতি। একদিকে ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, আর অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে এককেন্দ্রিক করে তোলে। সেই বৃত্তের কেন্দ্রে ছিল শুধুই যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক বছরে সেই বৃত্তে আলাদা প্রভাব বলয় সৃষ্টি করেছে চীন ও রাশিয়া। ওদিকে জাতিসংঘ ক্রমেই খেলনা পুতুলে পরিণত হচ্ছে। দিন দিন শক্তি ও প্রভাব হারাচ্ছে সংস্থাটি। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাও সুবিধের নয়। সব মিলিয়ে নতুন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সমগ্র বিশ্বে একটি ওলট-পালট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
নতুন করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বকেই বদলে দিচ্ছে। সমাজ ও অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাস বদলে দিচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিকে। পৃথিবীর নেতৃত্বের ব্যাটন কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে দোলাচল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হয়েছিল দ্বিমেরু বিশিষ্ট বিশ্ব রাজনীতি। একদিকে ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, আর অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে এককেন্দ্রিক করে তোলে। সেই বৃত্তের কেন্দ্রে ছিল শুধুই যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক বছরে সেই বৃত্তে আলাদা প্রভাব বলয় সৃষ্টি করেছে চীন ও রাশিয়া। ওদিকে জাতিসংঘ ক্রমেই খেলনা পুতুলে পরিণত হচ্ছে। দিন দিন শক্তি ও প্রভাব হারাচ্ছে সংস্থাটি। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাও সুবিধের নয়। সব মিলিয়ে নতুন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সমগ্র বিশ্বে একটি ওলট-পালট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্ত ও প্রাণহানি তো আছেই, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা কাণ্ডকীর্তি। একবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ধুয়ে ফেলছেন, তো আরেকবার বলছেন ঘরে বসে অননুমোদিত ওষুধ খেতে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মহামারিকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখতে পারেনি। নিন্দুকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ‘পাগলামি’র কুপ্রভাব বেশি। তাঁর কারণেই দিশা হারিয়ে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে দেশটি এখনো নতুন করোনাভাইরাসকে ‘উহান ভাইরাস’ সাব্যস্ত করতেই উঠেপড়ে লেগে আছে।
ওদিকে চীন কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। করোনাভাইরাসের প্রাথমিক ধাক্কা পুরোটাই চীন সামাল দিয়েছে। যদিও দেশটি যেভাবে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, তার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ আছে। চীনের দেওয়া তথ্যের (আক্রান্ত ও প্রাণহানি সম্পর্কিত) সত্যতা নিয়েও সন্দিহান মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে তার পরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন করোনা পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর চীন যেভাবে বিভিন্ন দেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তার প্রশংসা হচ্ছে। আর এই জায়গাতেই যুক্তরাষ্ট্রের দোষারোপের খেলা থেকে নিজেদের আলাদা করে তুলেছে সি চিন পিংয়ের দেশ।
ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া করোনাভাইরাসে বেশ ভুগছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে চীনের মতোই এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য রাশিয়া প্রকাশ করছে না। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যতটুকু খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে রাশিয়ার অবস্থা নাজুক বলেই জানা যাচ্ছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রাশিয়া নিজেদের একেবারেই গুটিয়ে নিয়েছে।
We use cookies to optimize our website and our service.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.