সাগরের ঢেউয়ে সৈকত ভাঙছে কক্সবাজারে। এতে লাবণী পয়েন্টের প্রায় দেড় কিলোমিটার সৈকত ভেঙে গেছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নামার প্রধান পথ হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। এ পয়েন্টে নামলেই সামনে পড়বে বিশাল ও বিপজ্জনক এক ভাঙন। ভাঙনের আশপাশে ছড়িয়ে আছে ইট–পাথর, ভাঙা সিমেন্টের স্ল্যাব আর ঢালাই লোহার খুঁটি। খেলার ছলে কিংবা সন্ধ্যা–রাতের অন্ধকারে দৌড়ঝাঁপ দিতে গিয়ে কোনো শিশু এ ভাঙনে একবার পড়ে গেলে আর রক্ষে নেই।
নদীভাঙনের মতো করে সাগরপাড়ের এ ভাঙন পর্যটকদের মনেও ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। অনেকেই আর লাবণী পয়েন্ট মাড়ান না, তাঁরা চলে যাচ্ছেন দক্ষিণ দিকের সিগাল, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের দিকে।
গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার–তৎপরতায় নিয়োজিত সি সেইফ সংস্থার লাইফগার্ড কর্মী আবদুল শুক্কুর বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতের একমাত্র নিরাপদ গোসলের জায়গা হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। কিন্তু ভাঙনের কারণে এখানে কেউ গোসলে নামতে পারছেন না। পর্যটকেরা সুগন্ধা ও কলাতলী সৈকতের মতো অনিরাপদ জায়গায় গিয়ে গোসল করছেন। গত এক মাসে সাগরে ভেসে মারা গেছেন এক শিশুসহ দুজন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, সৈকত লাগোয়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ দিকে লাবণী পয়েন্টের মুক্তমঞ্চ পর্যন্ত ঝাউবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) তৈরি করা হয়েছে এক যুগ আগে। হাঁটাপথের পশ্চিম পাশে (সমুদ্রের দিকে) সৃজিত হয় ঝাউবাগান। কয়েক বছর ধরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের ধাক্কায় সৈকত বিলীন হচ্ছে। উপড়ে পড়ছে উপকূল রক্ষার হাজার হাজার ঝাউগাছ। এর মধ্যে ডায়াবেটিক হাসপাতাল, শৈবাল ও লাবণী পয়েন্টে প্রায় ৫০০ মিটার সৈকত এলাকায় বড় আকারে ভাঙন ধরেছে। এর মধ্যে লাবণী পয়েন্ট অংশে হাঁটার রাস্তাটি ভেঙে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। এখন ভাঙা অংশ মেরামত করা, ভেঙে পড়া নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়া কিংবা সেখানে ‘বিপজ্জনক’ ভাঙন চিহ্নিত কোনো সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়নি।
গত শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মানুষ সৈকতে নামছেন, কিন্তু ভাঙনের কারণে পানিতে নামতে না পেরে অনেকে হতাশ হয়ে দক্ষিণ দিকের সিগাল, সুগন্ধা ও কলাতলী সৈকতের দিকে চলে যাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে সৈকতে ঘুরতে আসা আবদুল হামিদ নামের এক পর্যটক প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এভাবে ভাঙন এমনি এমনি হয়নি। তাঁর ভাষ্য, একটু দূরে ছোট একটি দেয়াল তুলে ঢালাই বাঁধ (গাইডওয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেই বাঁধের কারণেই সৈকত ভাঙছে।
রাতারাতি মেরামত করা হতো। কিন্তু কক্সবাজারে এসব দেখার যেন কেউ নেই। তিনি আরও বলেন, সৈকতে যে অবস্থা, তাতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।