কতদিন আর মাস্ক পরে থাকতে হবে? এই প্রশ্নটা এখন ছোট-বড় সবার মাথাতেই কমবেশি ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ দেখা যাচ্ছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট টিকা নেওয়া এবং না নেওয়া উভয় ব্যাক্তিদের ওপরেই প্রভাব বিস্তার করছে। তাই বাড়ছে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা। শিশুদের নানারকম উপহার দিয়ে এ বিষয়ে সচেতন করার প্রয়াস চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি প্রেস বিবৃতিতে মাস্ক বিরোধী আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন। তবে কিছু দেশ মানুষকে মাস্ক করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। স্ট্যানফোর্ড, ইয়েলের গবেষকরা বাংলাদেশের ৬০০ টি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়েছেন এবং বিস্মিত হয়েছেন এই দেখে যে তাঁরা মাস্কের ব্যবহার সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। গবেষকরা জানাচ্ছেন নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে বিশেষ করে যাদের ভ্যাকসিন কেনার ক্ষমতা নেই তাদের মাস্ক পরার অভ্যাস কোভিড -১৯ প্রতিহত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।
একদিকে যখন বাংলাদেশের এই চিত্র তখন অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে মাস্ক নিয়ে চলছে রাজনীতি। ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক মুশফিক মোবারক জানাচ্ছেন, মহামারীর প্রথম দিকে তিনি একটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ২০২০ সালের মে মাসে তার জন্মভূমি বাংলাদেশে কাজ করার সময়, তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে মাস্ক না পরলে জরিমানার ব্যবস্থা করেছিল দেশের সরকার। তা সত্ত্বেও অনেকেই অবলীলায় মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি শঙ্কিত হয়েছিলেন – কারণ করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশীদের জন্য মাস্কই প্রতিরোধের বড় হাতিয়ার ।বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি, যেখানে জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এককথায় অসম্ভব । জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ আইনের অধ্যাপক লরেন্স গোস্টিন বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ পরিকাঠামো এখনো ততটা শক্তিশালী নয় , তাই এই পরিবেশে যদি কেউ কোভিড-১৯ গুরুতর আক্রান্ত হন তাহলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা অসুবিধে।
তাই মোবারক বাংলাদেশীদের কীভাবে মাস্ক পরতে সচেতন করা যায় তা খুঁজে বের করার জন্য একটি অভিযানে বেরিয়েছিলেন।মোবারক এবং একদল গবেষক বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সাথে মিলে একটি প্রোগ্রাম ডিজাইন করেন। এবং সেখানে ঠিক হয় মাস্ক পরার গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হবে। প্রথমে তাঁরা বাংলাদেশের ৬০০ টি গ্রামে গিয়ে মোট ৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৩০ জন লোকের সঙ্গে দেখা করেন । পরীক্ষাটি গতবছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে করা হয়েছিল। এই ৬০০ টি গ্রামের মানুষের মধ্যে ৩০০ টি গ্রামের মানুষকে ৮ সপ্তাহের জন্য মাস্ক পরার কথা বলা হয়েছিল, বাদ বাকি ৩০০ টি গ্রামের ওপর তারা কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। এই ৮ সপ্তাহের মধ্যে ৩০০ টি গ্রামের মানুষ মাস্ক পরাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছিলেন। প্রতিটি পরিবারকে তিনটি করে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , জাতীয় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান কীভাবে মাস্ক পরেন তা ভিডিওর মাধ্যমে দেখানো হত। গবেষকদের থেকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে শুক্রবার নামাজ পাঠের সময়ে মসজিদের ইমামরা মানুষকে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করতেন। স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে মানুষকে মাস্ক নিয়ে সচেতন করতেন। এছাড়াও গবেষকরা একটি কৌশল নিয়েছিলেন , বলা হয়েছিল গ্রামের প্রবীণরা যদি ৮ সপ্তাহ টানা মাস্ক ব্যবহার করেন তাহলে তারা আর্থিক পুরস্কার পাবেন। এছাড়াও মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে নিরন্তর মাস্ক নিয়ে সচেতন বার্তা পাঠানো হত। ৮ সপ্তাহ পরে মোবারক এবং তাঁর দল দ্বিতীয় পরীক্ষাটি শুরু করেন। আগামী ১০ সপ্তাহ তাঁরা দেখতে শুরু করেন কতজন আদৌ মাস্ক পরে চলাফেরা করছে। তাঁরা বিস্মিত হন এই দেখে যে , নিরন্তর প্রচার চালিয়ে মাস্ক পরার প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে ১৩ %। সেই সঙ্গে দেখা যায়, টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে যেভাবে প্রচার চালানো হয়েছিল তা মানুষকে বেশি নাড়া দিয়েছে। আপাতত, গবেষকরা তাদের পরীক্ষা -নিরীক্ষার সেরা অনুশীলনগুলিকে NORM নামে একটি মডেলে পরিণত করেছেন।