ভয়ংকর হচ্ছে করোনার থাবা কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে

করোনা মহামারির ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে করোনা সংক্রমণের ১০০ দিন পেরিয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার আটজন এবং দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮ হাজার ৪৮৯ জন। আক্রান্তের এই সংখ্যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে এ পর্যন্ত যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের ৪৭ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন শেষ ১৫ দিনে। একইভাবে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে আক্রান্তের সংখ্যাও একই হারে বাড়বে। শনাক্ত না হওয়ায় অনেক রোগী এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং অন্যদের সংক্রমিত করছেন। লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রেও অনেক ঘাটতি। এখনই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেক রোগীর। রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে তাঁদের ঠাঁই হবে কোথায়? তাই আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কিভাবে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কোনো কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী মনে করছেন, বাংলাদেশে আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি রয়েছে, আর কয়েক দিনের মধ্যে লেখচিত্রের চূড়া নিম্নগামী হবে। তাঁরা আগামী দু-তিন সপ্তাহ সময়কে সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করছেন। তাঁদের মতে, এই সময়ে কঠোর লকডাউন ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করা গেলে আমাদের অনেক বেশি মূল্য চুকাতে হতে পারে। একই সময়ে জনগণকেও সর্বোচ্চ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। কারো কারো মতে, বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ সরঞ্জাম ও ভেন্টিলেটরের গুরুত্ব অনেক বেশি। অথচ এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাই ফ্লো অক্সিজেন নেজাল ক্যানুলা থাকলেও ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন অনেক কমে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এরও সরবরাহ নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত এই ক্যানুলার সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে করোনা শনাক্তকারী পরীক্ষার সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে হবে। রোগী শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগ ছড়াতেই থাকবেন। সুযোগ সীমিত থাকায় অনেকে দিনের পর দিন লাইন দিয়েও পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এটি কোনো দিক থেকেই কাম্য নয়। একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সঠিকতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে সেসব দূর করতে হবে। করোনাযুদ্ধে সরকারকে আরো সক্ষমতা দেখাতে হবে এবং সাধারণ মানুষকেও সর্বোচ্চ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। আমরা আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অচিরেই সফলভাবে করোনা মোকাবেলায় সক্ষম হব।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

%d bloggers like this: