বৃষ্টিতে অনাসৃষ্টি, গোটা রাজধানীতে থইথই পানি

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। গতকাল ভোর ৬টার আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাতে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজধানীর কোথাও কোথাও জলাবদ্ধ রাস্তা, ঝরছে বৃষ্টি, সেই সঙ্গে ছিল না পর্যাপ্ত গণপরিবহণ। সব মিলিয়ে কাজে বের হয়ে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মঙ্গলবার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলি ও মূল সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে করে সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েন কাজে বের হওয়া মানুষজন। অনেক স্থানে রাস্তা ও ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এতে করে নগরজীবনে স্বাভাবিক চলাচলে ছন্দপতন ঘটে।

বর্ষা বা বৃষ্টি মানেই রাজধানীবাসীর কাছে জলাবদ্ধতার এক তিক্ত অভিজ্ঞতার নাম। এদিকে, সোমবারের তুলনায় গতকাল বৃষ্টিপাত কম হলেও আজিমপুর, নিউমার্কেট, রাজাবাজার, ফার্মগেট, মগবাজার, মাতুয়াইল, মতিঝিল, ফকিরাপুল ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সরেজমিনে দেখা গেছে, নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে জমে থাকা পানির উপর খেলা করছে শিশুরা। জরুরি প্রয়োজনে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভ্যানে করে রাস্তা পার হচ্ছেন অনেকেই।

আবার নিম্ন আয়ের মানুষজনকে পানিতে কাপড় ভিজিয়েই রাস্তা পার হতে দেখা গেছে। অথচ পাশে থাকা বড় ডাস্টবিন থেকে ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পানিতে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, সোমবারের বৃষ্টিতে মার্কেটের ভেতরে পানি ঢুকলেও গতকাল এক নম্বর গেটের সামনে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় ক্রেতা সমাগম ছিল না। দুপুরের পরও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। জলাবদ্ধতার কারণে বেচাকেনা একেবারেই খারাপ বলেও জানান বিক্রেতারা। এছাড়া, আজিমপুর কবরস্থান রোড, ধানমন্ডি ২৭, পশ্চিম রাজাবাজার, পূর্ব রাজাবাজার, ফার্মগেট, মগবাজার ও ক্ষিলখেতসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে, উত্তর রায়েরবাগের দিকে একটি সড়কের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া সেখানের ইনু পট্টির দিকেও কিছু নিচু সড়কে পানি জমে। এসব সড়ক দিয়ে মানুষকে কষ্ট করে চলাচল করতে দেখা গেছে। উত্তর রায়েরবাগের বাসিন্দা আহাদ আলী জানান, সব জায়গায় নতুন সড়ক হলো। দোতলা মসজিদ থেকে যে সড়কটি ইনু পট্টির রাস্তায় গিয়ে মিলেছে, সেই সড়কটি কালভার্ট পর্যন্ত হলো, বাকি অংশটা নিচুই রয়ে গেল। তাই এখানে বৃষ্টি হলেই পানি ওঠে বলে জানান তিনি। স্থানীয়রা জানান, মাতুয়াইল কবরস্থান থেকে মাদ্রাসা বাজার যেতে সড়কের কিছু কিছু স্থানে পানি জমেছিল। তবে কোথাও পানি জমলেও তা আবার দ্রম্নতই নেমে যাচ্ছে।

শ্রাবণের এমন ধারা আরও ৩ দিন শ্রাবণের ভারী আকাশ থেকে ঝরো ঝরো বৃষ্টি চলছেই। এই একটু থামে, আবার ঝেঁপে নামে। গত দুদিনের আবহাওয়ার চিত্র এ রকমই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃষ্টির এমন ধারা আরও তিন দিন থাকতে পারে। বৃষ্টির কারণ সম্পর্কে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে প্রবল সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এ কারণেই দেশের সব জায়গাতেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া দপ্তরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা খুব একটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া দপ্তরের সকালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। ছয় ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার জেলায়, ৫১ মিলিমিটার। এছাড়া কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৩৩, ময়মনসিংহে ৩৭, কুমিলস্নায় ৩১, নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, দুই বা তার বেশি দিন বৃষ্টি হতে পারে। এরপর কয়েক দিন বৃষ্টির মাত্রা কমবে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলকে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই কারণে রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.