ছুটিছাটা বলে কিছু নেই। ছুটির দিনে হয়তো ভিড়টা বেশি। কিন্তু প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটকের পা পড়েছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে, জলপ্রপাতের কাছে। বহু বছর ধরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের চেহারা এ রকমই। একদিকে জলপতনের গমগম আওয়াজ, অন্যদিকে মানুষের বিচরণ। টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছে পাহাড়ি নির্জনতার শান্ত প্রকৃতি।
কিন্তু করোনাকাল যেন সেই প্রকৃতিকে তার আপন সৌন্দর্যে ফেরার একটুখানি সুযোগ করে দিল। পর্যটকের ভিড় নেই। নেই চেনা সেই কোলাহল। এতে নির্জন পাহাড়ি ঝরনার কাছে একটু একটু করে ফিরে আসছে বুনো আনন্দ। বন্য প্রাণীরা ফিরছে তাদের হারানো জায়গাটিতে। ঝরনার কাছে পাথরে পাথরে ঘুরছে শামুক, পাহাড়ি কাঁকড়া। সন্ধ্যায় হরিণ ডাকছে। ঘুরছে বনমোরগ। গাছে গাছে লাফালাফি বেড়েছে বানরের। অচেনা ঝোপ-লতাপাতা মাথা তুলছে খোলা ফাঁকফোকরে।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের হৃদয় খোঁড়ে তৈরি হওয়া মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক বন্ধ। নেই পর্যটকদের আনাগোনা। বন্ধ হয়ে আছে শতাধিক ছোটবড় দোকানপাট। নেই গাড়ি চলার শব্দ। মাধবকুণ্ডের প্রকৃতি এখন শান্ত, নিঝুম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এখন মাধবকুণ্ডে মানুষের পদচারণা নেই বলে ফিরছে প্রাণ-প্রকৃতি। মাধবকুণ্ডে চলার পথে জমে ওঠেছে শ্যাওলা। ফাঁকা জায়গাগুলোতে মাথা তুলছে বুনো ঘাসলতা, জেগে উঠছে চেনা-অচেনা গাছ। মাধবকুণ্ড ঝরনার কাছে পাথরে পাথরে ছড়িয়ে আছে ছোটবড় শামুকের ঝাঁক। একটু সাড়া পেলেই পাথরের ফাঁকে ফাঁকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে পাহাড়ি কাঁকড়া, যা মাধবকুণ্ডে পর্যটকের উপস্থিতির সময় কখনোই দেখা যেত না। মাধবকুণ্ডের কোলে যারা বড় হয়েছেন, সেই আদিবাসী মানুষগুলোও পুরোনো সময়ের সঙ্গে মিল খোঁজে পাচ্ছেন নতুন পরিবেশের, যা তাঁদের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। একটু একটু করে তা আবার ফিরে আসছে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত-সংলগ্ন মাধবকুণ্ড আদিবাসী খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) ওয়ান বর এল গিরি। তিনি বলেন, ‘মাধবকুণ্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন অনেক ভালো। করোনার আগে শামুক ও কাঁকড়া দেখা যেত না। এখন সিঁড়ির ওপরে শামুক ও পাহাড়ি কাঁকড়ার চলাফেরা দেখা যাচ্ছে। পাল পাল বনমোরগ দেখা যাচ্ছে। যখন ছোট ছিলাম, দেখতাম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ছড়ায় মাছ ধরছেন। আগে যেভাবে ছড়াতে মাছ ধরতে দেখতাম, এখন সেভাবেই মাছ ধরা হচ্ছে।’