সারাদেশের প্রবল বন্যার প্রকোপ এখন রাজধানীর দিকেও প্রলম্বিত হচ্ছে। বন্যার কবলে পড়েছে ঢাকার নিম্নাঞ্চল ।এসব এলাকার অধিকাংশ স্থান এখন পানিবন্দি। বালু নদীর পানি বিপদ-সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বালু নদীকে ঘিরে যে কয়েকটি এলাকা রয়েছে সে এলাকাগুলো নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে । সে এলাকাগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৭০, ৭১, ৭৩ ও ৭৫ ওয়ার্ড। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বর্তমানে বালু নদীতে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নদীতে পানির সর্বোচ্চ স্তর ৭ দশমিক ১৩ মিটার। এই নদীর পানির সমতল ৫ দশমিক ৮৭ মিটার।
দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি জমা হচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। যে কারণে ঢাকা ও তার আশপাশের
নিম্নাঞ্চল গুলো ডুবে গেছে। বঙ্গোপসাগরের দিকে এ পানি নামছে খুব ধীরগতিতে। ফলে দিন দিন নগরীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খুব সহসাই পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।এ ছাড়া তিস্তার পানির একটা অংশ ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা হয়ে এ এলাকায় আসে। সেই পানির অর্ধেক অংশ ভৈরব আর অর্ধেক শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর অববাহিকায় চলে আসে। এ কারনে বালু নদীতে পানি বেড়েছে। তাই আশপাশের এলাকাগুলো তলিয়ে যাচ্ছে।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার বাসাবাড়ি, রস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ সব কিছুই পানিতে ডুবে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,বন্যার পানির কারণে এ অঞ্চলের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। তারা জীবিকার অন্বেষনে বের হতে পারছেন না । বাড়ির আঙ্গিনার সবজি বাগান ডুবে যাওয়ায় বাড়তি উপার্জনের পথও বন্ধ রয়েছে। হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। যাতায়াতের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় শহরের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না বেশিরভাগ মানুষ । রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগের জন্য ডিঙ্গি নৌকা বা অন্য নৌ-যান ব্যবহার করা হচ্ছে । বাসা বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে মাচা পাততে হচ্ছে।রান্না হচ্ছে ঘরের মাঁচায় বা ছাদে । অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০ নম্বর ওয়ার্ড হলো ডেমরা এলাকা। এই এলাকার দেইল্লা, পাইটি, কায়েতপাড়া, ঠুলঠুলিয়া, খলাপাড়া, তাম্বুরাবাদ, নলছাটা, ধীৎপুর, মেন্দিপুর, আমুলিয়া ও শূন্যা টেংরা এলাকার নিম্নাঞ্চল বালু নদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ,বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও পানিবন্দি।
একই অবস্থা বিরাজ করছে ডিএসসিসির ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের মান্ডা, কদমতলী, ঝিলপাড়া ও উত্তর মান্ডা এলাকায়। এই এলাকাগুলোতে বালু নদীর পানি অভ্যন্তরির খালগুলো দিয়ে প্রবেশ করে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে খাল তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।ঐ এলাকার মানুষ-জন এখন পানিবন্দি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. খাইরুজ্জামান বলেন, ‘এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এলাকার জন-জীবন বিপর্যস্ত। বন্যার পানির কারনে অনেক মানুষ নিম্নাঞ্চল এলাকার ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু এলাকাগুলোতে চলে এসেছেন। আরও অনেক প্রস্ততি নিচ্ছেন বাড়ি ছাড়ার।‘
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষ থেকে অনেক পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও দুর্গতদের সহযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিএসসিসি মেয়রও খোঁজখবর নিচ্ছেন কোন কোন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তবে সিটি করপোরেশন থেকে কোন সহযোগিতা আসেনি। ’
ডিএসসিসির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণগাঁও, ভাইগদিয়া ও মানিকদিয়া খালের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কাজ না থাকায় দেখা দিয়েছে অভাব।
খিলগাঁও থানাধীন ডিএসসিসির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে ইদারকান্দি, ফকির খালী, বালুর পাড়, বাবুর জায়গা, দাসেরকান্দি, জোড়ভিটা, ত্রিমোহনী উত্তরপাড়া, নাসিরাবাদ উত্তর পাড়া, নাসিরাবাদ টেকপাড়া, ইমামবাগের কিছু অংশ, উত্তরগাঁও, শেখের জায়গা ও নাগদারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় দেড় থেকে আড়াই ফুট পানি বেড়েছে। এসব এলাকার বসবাসরত মানুষের বসতবাড়িতে পানি উঠে পড়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. আকবর হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষের কোন কর্ম নেই। নৌকা দিয়েই বাসাবাড়িতে যেতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ খুবই কষ্টে আছে। বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ করতে নৌ-যার ব্যবহৃত হচ্ছে।’
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে , রাজধানীর বন্যা কবলিত এলাকার এই মানুষ গুলো করোনা মহামারী ,বন্যা,কর্মহীনতার কারনে এখন অসহায়। তারা সরকারী সহায়তার আশায় আছে।