করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকার পর পুরনো রূপে ফিরছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। তীব্র গরমেও সৈকতে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি সংশ্লিষ্টদের আশান্বিত করেছে। তবে জেলা প্রশাসন নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অধিকাংশ পর্যটক।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর থেকেই ভিড় করতে শুরু করেছেন পর্যটকসহ স্থানীয় দর্শনার্থীরা। ঘুরতে এসে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। তবে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মাইকিং করতে দেখা গেছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে।
করোনার কারণে চার মাস কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এতে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল সৈকত। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। তাই পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে চিরচেনা সৈকত। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে ভিড় করছেন পর্যটকসহ দর্শনার্থীরা। দীর্ঘসময় পর ঘরবন্দি মানুষ সৈকত দেখতে পেয়ে দারুণ উচ্ছসিত।
স্থানীয় দর্শনার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সৈকতে প্রবেশ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় ঘুরতে এলাম। এখানে এসে অনুভূতি প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কারণ, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুর জন্য পছন্দের একটি স্থান।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রিয়াজ আহমেদ বলেন, ঘরবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে সৈকত দেখতে এলাম। এখানে এসে দীর্ঘদিনের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছি।
আরেক পর্যটক সুলতানা রহমান বলেন, সৈকতে জন সমাগম দেখে মনে হচ্ছে সেই পুরনো চিরচেনা সৈকতকে ফিরে পেয়েছি। শুধু বাড়তি যুক্ত হয়েছে কিছু মানুষের মুখে মাস্ক। অনেকে গ্লাভস পরে রয়েছে। কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে, আবার অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না। যা আমাদের সবার জন্যই ক্ষতির কারণ।
এদিকে, সৈকতে প্রবেশের অনুমতি থাকলেও হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও বার্মিজ দোকানগুলো এখনো পুরোদমে খোলেনি। তবে দর্শনার্থীদের আগমনে দারুণ খুশি সৈকতের ফটোগ্রাফার ও বিচবাইক চালকরা। বিচবাইক চালক রশিদ বলেন, অনেক দিন পর প্রাণ ফিরে পেয়েছি। সৈকতে মানুষজন আসছে। তাদের বাইকে চড়িয়ে কিছু অর্থ উপার্জন হচ্ছে।
ফটোগ্রাফার সোহেল বলেন, দর্শনার্থীদের ছবি তুলতে ক্যামেরা হাতে সৈকতে নেমেছি অনেক দিন পর। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫০০ টাকা আয়ও করেছি। এখন খুবই খুশি লাগছে।
করোনার কারণে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রচারণা ও মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। তবে অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক শাকের আহমেদ বলেন, ‘শিথিলতার কারণে পর্যটকসহ স্থানীয় দর্শনার্থীরা ছুটে আসছে সৈকতে। কিন্তু সৈকতের প্রবেশের পয়েন্ট থেকে শুরু করে পুরো সৈকতের ছয়টি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ করোনা পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং করছে। এর পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেকে মানছেন, অনেকেই মানছেন না। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট থেকে সৈকতের দোকানপাট, রেস্তোরাঁ ও সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল কাজ করছে।’