নতুন নিয়োগ নেই, বিপাকে জব সাইট

কভিড-১৯ সংকটে সারা বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত হলেও তা কর্মহীন মানুষের তুলনায় সামান্যই। দেশেও এর প্রভাব পড়েছে এরই মধ্যে। কর্মী ছাঁটাই করেছে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি লোকবল কমিয়ে আনার কথা ভাবছে ব্যাংকগুলোও। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপনও তাই স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর এতে সীমিত হয়ে এসেছে তাদের আয়ও।  দেশে চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সংযোগ তৈরিতে কাজ করছে বিডিজবস, এনআরবিজবস ও কর্মসহ আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। তাদের দেয়া তথ্য বলছে, কভিড সংক্রমণ শনাক্তের পর গত এপ্রিলে চাকরির বিজ্ঞপ্তি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৮০ শতাংশ কমে যায়। পরের মাসে তা কিছুটা বাড়লেও অন্য সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম বিজ্ঞপ্তি দেন চাকরিদাতারা। তবে চলতি মাসে নতুন কর্মী চেয়ে বিজ্ঞাপন আগের দুই মাসের চেয়ে বেড়েছে। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় তা প্রায় অর্ধেক। পাশাপাশি চাকরিতে দক্ষতা বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ থেকে আয়ও কমেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণেই এখন গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। শীর্ষ জব পোর্টাল বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফাহিম মাশরুর বণিক বার্তাকে বলেন, চাকরির বাজারের এ পরিস্থিতি ছয় মাস এ রকমই থাকবে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লোকবল কমিয়ে আনছে। তৈরি পোশাক খাতে তিন মাস নতুন কোনো নিয়োগ হয়নি। ব্যাংকগুলোর অবস্থাও সংকটপূর্ণ। এ অবস্থায় নতুন লোকবল নিয়োগ হচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আর ই-কমার্স খাতেও নতুন জনবল নেয়া হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উৎপাদনমূখী খাতে নতুন নিয়োগ একেবারেই বন্ধ। মূলত সেবাখাতের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। চাকরীর বাজারের এ মন্দাবস্থার প্রভাব পড়েছে জব সাইটগুলোতে। আয়  কমে যাওয়ায় নিজেদের লোকবল ছাঁটাই করেছে কোন কোন প্রতিষ্ঠান। অফিসের পরিসরও ছোট করে এনেছে তারা। আবার কর্মীদের বেতন কমিয়েও টিকে থাকার চেষ্টা করছে তাদের কেউ কেউ।

অন্যতম জব সাইট এনআরবি জবস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ই চৌধুরী শামীম বণিক বার্তাকে বলেন, এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হবে। সহসাই চাকরীর বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না। ফলে এটি মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্ততি নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে সহমর্মিতার মানসিকতা নিয়ে চাকরীদাতা ও কর্মীদের উভয়পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে, যাতে করে ছাঁটাই না করে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারে।

সংক্রমণ ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে দেশে দেশে লকডাউন দেয়া হয়। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাওয়ায় আয়ের পথও রুদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলে প্রথমেই পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ হিসেবে লোকবল কমানোর ঘোষণা দেয় তারা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কভিডের প্রভাবে আড়াই কোটির বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছে। আর সারা বিশ্বে প্রায় ২৭ কোটি তরুণ-তরুণী এ মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, নভেল করোনাভাইরাস সংকটে বাংলাদেশের প্রতি ছয়জন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ যুবক বেকার রয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকেই বেকারত্ব বাড়ছে। মহামারীর প্রভাবে যুবাদের প্রতি ছয়জনে একজন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মহামারীতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনভাবে। কর্মহীন হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে তাদের। এতে চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.