সিনেমা এমন একটি মাধ্যম যা একই সাথে আপনার দৃষ্টির এবং ভাবনার খোরাক যোগায়। দেশে দেশে নানান গল্পের, নানা্ন সাবজেক্টের সিনেমাই তৈরি হয়। আমাদের আজকের আয়োজন এমন কিছু সিনেমা নিয়েই যেগুলো এই মহাবিশ্ব, তার সৃষ্টিরুপ বা কোন দূর্দান্ত অভিযান নিয়ে নির্মিত। যা হয়তো আপনাকে উৎসাহ যোগাবে ঘরের বাহিরে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপের, জীবন কে দেখার কিংবা সভ্যতার বিকাশ ও বৈভব কে জানার। বলে রাখা ভালো সিনেমা গুলো বাছাই করা হয়েছে একান্তই নিজের পছন্দের ভিত্তিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ‘ক্রিস্টোফার ম্যাকক্যান্ডলেস’ নামের এক শিক্ষার্থী তার এতদিনের সঞ্চয় বিলিয়ে দিয়ে এবং সচরাচর জীবন ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে বুনো জীবন আর প্রকৃতির পথে। সব ক্রেডিট কার্ড এবং পরিচয় পত্র নষ্ট করে আলাস্কার উদ্দেশ্যে তার এই দুই বছরের ভ্রমণের সময় সে জড়িয়ে যায় নানা রকম মানুষ ও জীবনের সাথে। এবং এই ভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটে নির্জন বনে একটি পরিত্যক্ত বাসে। বিষাক্ত বুনো আলুর বীজ খেয়ে সেই বাসে ক্রিস্টোফার মৃত্যুবরণ করার পূর্বে ডায়রিতে লিখে যায় তার এই আশ্চর্য ভ্রমণের নানাগল্প। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটির নির্মাতা শন পেন। সিনেমাটি চিত্রনাট্য নির্মাণ করা হয় জন ক্রাকায়ের বই ‘ইন্টু দ্যা ওয়াইল্ড’ অবলম্বনে।
পৃথিবী এবং তার মধ্যকার এই জীবন, প্রকৃতি, পাহাড়, আগ্নেয়গিরি, মানুষ, তাঁর ধর্ম, কৃষ্টি-কালচার, বেঁচে থাকা আর বেড়ে ওঠা, সভ্যতার সংকট কিংবা সঞ্চালন এইসবের মুগ্ধকর উপস্থাপন এই ডকুমেন্টারি সিনেমাটি। যা আপনাকে দেবে জীবনকে আর এই বিশ্বকে নতুন করে চেনার জানার চোখ। নন ন্যারেটিভ এই সিনেমাটির মূল আকর্ষণ সঙ্গীত আর দৃশ্যের উপস্থাপন। ১৪ মাস জুড়ে, ২৪ টি দেশ আর ৬ টি উপমহাদেশে এই সিনেমাটির দৃশ্যায়ন চলে। সিনেমাটির পরিচালক ‘ রন ফ্রিক’।
সামসারা বিস্ময়কর এই পৃথিবীর পথে পথে মানুষের অভিজ্ঞতা ও জাদুকরি এক জীবনের গল্প বলবে আপনাকে। প্রকৃতি আর জীবন বৈচিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে এই সিনেমা আপনাকে দেখাবে আধ্মাত্ববাদের গহীনে মানুষের বিচরণ আর অভিজ্ঞতা। পৃথিবী জুড়ে বৈচিত্রময় মানুষ আর তার জীবনকে দেখার স্বাদ আপনার মাঝেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। পাঁচ বছর যাবত পঁচিশটি দেশে এই সিনেমাটির শুটিং করা হয়। এই সিনেমাটিও পরিচালনা করেছেন ‘রন ফ্রিক’।
প্রেমিকাকে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে কাশীর অনির্দিষ্ট যাত্রা এবং তার ভ্রমণ সঙ্গী বন্ধু সানি। কেরালা হতে উড়িষ্যা, পুরী, কলকাতা, আসাম এবং নাগাল্যান্ড এর পথে পথে ভ্রমণের সময় নানা ঘটনা আর চড়াই উতরাই তাদের জীবনকে কিভাবে পরিবর্তন করে দেয় তা নিয়েই এই সিনেমা। সিনেমাটি ২০০৪ সালে চে গুভারার প্রথম দিকের জীবন ও ভ্রমণ নিয়ে নির্মিত ‘দ্যা মোটর সাইকেল ডাইরিজ’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা মালায়ালাম ভাষার সিনেমা। সিনেমাটির পরিচালক ‘সামীর তাহির’।
আর্ট অফ ট্রাভেল’ জীবনের সুন্দর সুখের গল্প। প্রেমিকার সাথে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর কননার লেইনের নিকারাগুয়ায় পাড়ি জমানো আর সেখানে সহযাত্রীদের সাথে তার এডভেঞ্চার এবং জীবনের দিকে দৃষ্টির আমূল পরিবর্তন নিয়েই এই চলচ্চিত্রটি। এই সিনেমার চোখ জুড়ানো দৃশ্যের সাথে মুগ্ধকর মনস্তত্ত্বের উপস্থাপন আপনাকে নিঃসন্দেহে পরবর্তী অভিযানের অনুপ্রেরণা ও সাহস জাগাবে। সিনেমাটির পরিচালক ‘থমাস উলান’।সা গ্রহণের পর মোটর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কানাডা হয়ে টরেন্টো থেকে ভ্যানকুভার দ্বীপ পর্যন্ত। যাত্রা পথের বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শ তাকে বাগদত্তা সামান্থার সাথে তার সম্পর্ক, চাকুরী এবং লেখক হবার বাসনা সব কিছুকে নতুনভাবে দেখার, পুনর্মূল্যায়ন করার দৃষ্টি দেয়। ভ্রমণ কালীন সময়ে কানাডার অপরূপ ভূচিত্র তার মধ্যে জীবনকে আরো গভীর ভাবে উপলব্ধি করার প্রেরণা দেয়। সিনেমাটির পরিচালক ‘মাইকেল ম্যাকগন’।
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত কার্টার চেম্বার্স এবং এডওয়ার্ড কোল জীবনে প্রথমবারের মতো হাসপাতালে এসে পরিচিত হয়। ওয়ার্ডে থাকা কালীন সময়ে কার্টার মৃত্যুর পূর্বে তার পূরণীয় ইচ্ছে গুলোকে লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু যখন জানতে পারলেন তার হাতে সময় আছে আর মাত্র এক বছর তখন কাগজ টা ছুঁড়ে ফেলে দিলে পরের দিন সকালে এডওয়ার্ড তা কুঁড়িয়ে পায়। এডওয়ার্ড কার্টারকে প্ররোচনা দিয়ে শুরু করে ইচ্ছে পূরণের তাগিদে বিশ্ব ভ্রমণ। মুভিটির পরিচালক ‘রব রেইনের’।
এলিজাবেথ গিলবার্ট, অন্য দশজন আধুনিক নারী যা চেয়ে থাকেন, তারও সব কিছুই ছিলো – স্বামী, সংসার, একটি বাড়ি আর সফল ক্যারিয়ার। কিন্তু ক্রমেই বুঝতে পারলেন এই জীবন তাকে ক্রমশ আরো হতাশ এবং দ্বিধান্বিত করে তুলছে। এরপর সদ্যই ডিভোর্সড হওয়া গিলবার্ট নিজেকে খুঁজে পেতে বিশ্বভ্রমনে নেমে পড়লেন, নিজের সচরাচর জীবনকে ত্যাগ করে। খুঁজতে চাইলেন তিনি আসলে কি হতে চেয়েছিলেন জীবনে। সিনেমাটির পরিচালক ‘রিযান মুরফি’।
চে গুভেরার প্রথম জীবনের অভিযানের গল্প নিয়ে চমৎকার অনুপ্রেরণা দায়ক বায়োগ্রাফিক সিনেমা ‘দ্যা মোটর সাইকেল ডায়ারিজ’। এই ভ্রমণের মধ্য দিয়েই চে ক্রমে আবির্ভূত হন একজন আদর্শ সেনাপতি রূপে। মুভি জুড়ে প্যাটাগোনিয়া, বুয়েনোস আইরেস, কারাকাস, আতাকামা মরুভূমি সহ দক্ষিণ আমেরিকার অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঝলক এবং জীবন যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটির পরিচালক ‘ওয়াল্টার স্যালেস’।
পিতার মৃত্যুর পর তিন ভাই একত্রিত হলে ট্রেনে ভারত ভ্রমণ করতে আসে। যারা প্রায় দীর্ঘ এক বছর নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ রাখে নি। এই ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যকার বন্ধন জোড়া লাগাতে আর নিজেদেরকে খুঁজে পেতে চায়। বিল মুরে, অ্যাডরিন ব্রডির, জেসন শাওয়ার্টজম্যান এবং ওয়েন উইলসন সিনেমাটিতে অভিনয় করেন। সিনেমাটিতে ভারতের রঙ, রূপ, সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য – বিশৃঙ্খলা এইসবের চমৎকার চিত্রায়ন করা হয়। সিনেমাটি পরিচালনা করেন ‘ওয়েস অ্যান্ডারসন’।