আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থায় মূলত সকল স্তরের মানুষের জন্য গড়ে উঠেছে। এর ফলে শুধুমাত্র এক স্তরের মানুষ পর্যটনের স্বাধ না পেয়ে সকল স্তরের সকল মানুষ বর্তমানে ভ্রমণে যাচ্ছে। যাতে পর্যটনের উন্নতি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থার জনক বলা হয় থমাস কুক-কে। থমাস কুক ছিলেন একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী। তিনি মূলত সকলের নিকট পরিচিত তার বহুল পরিচিত ‘থমাস কুক এন্ড সন’ (Thomas Cook & Son)-নামক ভ্রমণ সংস্থার কারণে। তিনি ভ্রমণের এমন পন্থা উদ্ভাবন করেন যা তার পূর্বে কেউ করেননি।

থমাস কুক:
১৮০৮ সালে মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন কুক। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি সেখানের বাজারে সাপ্তাহিক ছয় পেন্স (তৎকালীন ব্রিটিশ মুদ্রা)-এর বিনিময়ে এক মালির সহকারী হিসেবে কাজ করতো। ১৪ বছর বয়সে তিনি তার চাচার সাথে আলমারি তৈরির কাজ শুরু করে। তিনি খ্রিস্টধর্মে দিক্ষা দেয়ার কাজেও লিপ্ত ছিলেন। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় লেইসেস্তেরে অতিবাহিত করেন। থমাস কুক ছিলেন একজন বিশিষ্ট স্ব-প্রতিষ্ঠ ব্যক্তিত্ত্বের অধিকারী। তাকে অনেক পেশা ও ব্যবসায় ঝুঁকি,বাধা-বিপত্তি, পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এমনকি এক সময় তাকে দেউলিয়াও হতে হয়েছিল।
কিন্তু, তিনি কখনই হাল ছাড়েননি বরং একের পর এক চেষ্টা করেই গেছেন। তিনি তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার জন্য সবসময় লড়ে গেছেন। ১৫০ বছর আগে তিনি ভ্রমণ ও পর্যটন নিয়ে যে বিপ্লব, যে অভিনবত্ব নিয়ে এসেছেন তা এখনও চলছে। সর্বসাধারণের অবসর সময় বা ছুটিগুলো সহজলভ্য, সাশ্রয়ী, সু-রুচিসম্মতভাবে অতিবাহিত করার পথ তিনি দেখিয়ে গেছেন। ছুটির দিনের প্যাকেজ, ভ্রমণ হুন্ডি বা চেক, হোটেলে ছাড়, ছুটির দিনের প্রচারপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন প্রথা নিয়ে আসেন,যার ফলে কম আয়ের মানুষও তাদের অল্প সময়ের ছুটিও অনেক সুন্দরভাবে উপভোগ করতে সক্ষম হয়।
শিল্প বিপ্লবের সময় নতুন নতুন রাস্তা, রেললাইন, রেলগাড়ি আসায় সবাই শহর মুখি হয়ে যাচ্ছিলো এবং এই কারণে ভ্রমণে বিভিন্ন দ্বার খুলে যায়। শিল্প বিপ্লবের পর সরকারিভাবে মানুষের সাপ্তাহিক ছুটি ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে মানুষ ভ্রমণের জন্য অধিক সময় পান। এছাড়াও অধিক অর্থ, জ্ঞান এবং ভ্রমণের উৎসাহ পায় কারণ, তখন ভ্রমণের জিনিসপত্র, যানবাহন ইত্যাদি সহজলভ্য হয়ে পরে। আর এই সুযোগটাই থমাস কুক লুফে নেন।
থমাস কুক এন্ড সন
১৮৪১ সালে মাত্র ১০ পাউন্ড দিয়ে ‘থমাস কুক & সন’ নামক একটি ভ্রমণ এজেন্সি খুলেন। তার এই এজেন্সির মাধ্যমে প্রথম ৫০০ জনকে নিয়ে ১২ মাইলের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভ্রমণ আয়োজন করেন, একই সালের ৫ই জুলাই তারিখে যার খরচ ছিল জনপ্রতি ১২ পেন্স বা ১ শিলিং(ব্রিটিশ মুদ্রা)। এটাই ছিল তার টার্নিং পয়েন্ট। এরপর তিনি একে একে লন্ডন, লিভারপুল, সেফফিল্ড, ব্রিস্টল সহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের আয়োজন করেন। এছাড়াও তিনি রেলগাড়ির মাধ্যমে প্যারিস, ব্রাসেল, ফ্রাঙ্কফ্রুর্টেও ভ্রমণ আয়োজন করেন।