আক্রান্ত-মৃত্যুর স্তূপে চাপা বিশ্ব

আক্রান্ত-মৃত্যুর স্তূপে চাপা বিশ্ব

মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে নাকাল গোটা বিশ্ব। চীনের উহান থেকে গত ডিসেম্বরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর যত দিন যাচ্ছে, ততই আক্রান্ত ও মৃতু্যর স্তূপ ভারী হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’র তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ত্রাস ছড়ানো করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ছয় লাখ ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া শনাক্ত রোগীও এক কোটি ৪৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা জরিপ সংস্থাটির মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগে শুক্রবার রেকর্ড ষংমফ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছিল। সেখান থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেল। শুধু আক্রান্ত নয়, মৃতের সংখ্যায়ও হয়েছে নতুন রেকর্ড। এতদিন বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু শনিবার ছাড়িয়ে গেছে সেই পরিসংখ্যানও। এদিন মারা গেছে রেকর্ড সাত হাজার ৩৬০ জন। যা ১০ মে-এর পর একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্য। চলতি মাসে বিশ্বব্যাপী দৈনিক মৃতের গড় চার হাজার ৮০০।

যেটা জুনে ছিল চার হাজার ৬০০। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে সরকারি হিসাবে ২০ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি রোগীর সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা বলা হয়েছে সরকারি ভাবে, মৃতু্যর সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে ৭৮ হাজার। লাতিন আমেরিকার এ দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরোর দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে। কট্টর ডানপন্থি এ প্রেসিডেন্ট প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ আরোপের বিরোধী ছিলেন। মতের মিল না হওয়ায় দুই দফায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বদলেছেন তিনি।

আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে নজুক অবস্থায় পড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা শনিবার সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে প্রায় পাঁচ হাজারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরার নির্দেশনা মানার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারকে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধসহ আগ্রাসী ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। করোনায় প্রথম মৃতু্য নথিবদ্ধ হয়েছিল চীনের উহানে। এরপর বিশ্বজুড়ে মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে কোভিড-১৯ এ মৃতু্যর সংখ্যা অত্যন্ত প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ম্যালেরিয়ার বার্ষিক মৃতু্যর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য ১ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এদিকে, করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটির ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৪৩টিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, তার মধ্যেই শনিবার দেশটিতে করোনায় মৃতু্য আরেকটি দুঃখজনক মাইলফলক পার হলো। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মৃতু্যর সংখ্যা এক লাখ ৪২ হাজার, আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ছাড়িয়েছে। গত জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, এর ছয় সপ্তাহ পর এখন মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি সপ্তাহেই সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার জনের মৃতু্য হচ্ছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডায় মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতু্য হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ জনের। মাত্র এক সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র প্রায় পাঁচ হাজার ৬০০ মৃতু্য রেকর্ড করেছে, যা চলতি বছরের প্রথমদিকে মহামারি শুরুর পর থেকে সুইডেনের মোট মৃতু্যর সমান।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আক্রান্ত কাউন্টিগুলোর কর্মকর্তারা মর্গগুলোতে মৃতদেহ রাখার মতো জায়গা পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার অ্যারিজোনার মারিকোপা কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে এমনটি ধরে নিয়ে মর্গের ধারণ ক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি করার পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। টেক্সাসের সান অ্যান্তোনিও ও বেক্সার কাউন্টি কর্তৃপক্ষ ১৮০টি মৃতদেহ রাখার জন্য পাঁচটি ‘রেফ্রিজারেটেড ট্রেইলার’ সংগ্রহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় কিছু রাজ্যে মহামারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতিতেও অবশ্য টলানো যাচ্ছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত মার্কিনিদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নির্দেশ দিতে তাকে রাজি করানো যায়নি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.